আমের মুকুল ঝরা রোধে করনীয় - আমের মুকুল আসার পর করণীয়
আপনার শখের আম গাছের মুকুল ঝরে যাচ্ছে, আমের মুকুল ঝরা রোধে করণীয় কি বুঝতে
পারছেন না। তাহলে এই আর্টিকেল আপনার জন্য। কারণ এ আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে আমের
মুকুল ঝরা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে।
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা আরো জানতে পারবেন, আমের মুকুল আসার আগে করনীয় কি,
আমের মুকুল আসার পর করনীয় কি। তাই আপনার আম গাছের মুকুলের যাবতীয় পরিচর্যা
সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ আমের মুকুল ঝরা রোধে করনীয় - আমের মুকুল আসার পর করণীয়
আমের মুকুল ঝরা রোধে করনীয়
আমের মুকুল ঝরা রোধে করনীয় কি আপনারা এই সম্পর্কে অনেকেই সঠিক তথ্য জানতে চান।
বিভিন্ন কারণে আপনার শখের আম বাগানের মুকুল ঝরে পড়ে যেতে পারে। যদি এই বিষয়টি
সম্পর্কে আপনারা আগে থেকে জেনে থাকেন এবং সে অনুযায়ী পরিচর্যা করে থাকেন তাহলে
আপনার আমের মুকুল ঝরা রোধ হবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক আমের মুকুল ঝরা রোধে
করণীয় কি।
আমের মুকুল ঝরা রোধে করনীয়ঃ
পানি সেচের ব্যবস্থা করাঃ আমের মুকুল ঝরার ক্ষেত্রে প্রথম যে কারণ সেটি হচ্ছে জমিতে রস না থাকার কারণে আমের
মুকুল ঝরে যায়। সাধারণত ফাল্গুন মাসে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে আম বাগানের
জমিতে রস কমে যায়। যার কারণে আমের মুকুল ঝরে যায়। তাই প্রথমে আপনাকে লক্ষ্য
রাখতে হবে আপনার আমের জমিতে রস আছে কিনা। যদি রস না থাকে তাহলে সেচের ব্যবস্থা
করতে হবে। যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে ১৫ দিন পরপর দুই থেকে তিনবার সেচ দিতে হবে।
শোষক পোকা দমন করাঃ আমের জমিতে বিভিন্ন প্রকার শোষক পোকার আক্রমণে আমের মুকুল ঝরে যেতে পারে। বিশেষ
করে হপার পোকা আক্রমণ করলে আপনার আম গাছের মুকুল সম্পূর্ণ ঝরে যেতে পারে। এছাড়াও
আম গাছে এক ধরনের ছোট ছোট সাদা পোকা হয় যে পোকার কারণে আমের মুকুল ঝরে যেতে
পারে। তাই শোষক পোকা দমন করার জন্য ইমিডাক্লোরোপিড গ্রুপের কীটনাশক ১ লিটার
পানিতে এক মিলি হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
এভাবে এক থেকে দুইবার স্প্রে করলে আমের মুকুল ঝরা বন্ধ হবে। তবে মনে রাখতে হবে
যদি আম গাছে ফুল থাকে তাহলে কীটনাশক স্প্রে না করাই ভালো অথবা স্প্রে করলে বিকাল
বেলা স্প্রে করতে হবে। বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন নামে ইমিডাক্লোরোপিড
পাওয়া যায়। যেমন- ইমিটাফ,জাদিদ,কনফিডর,টিডো,মুক্তি,ক্যাপচার । এদের মধ্য থেকে
যে কোন একটি ব্যবহার করলে হবে।
হরমোন স্প্রে করাঃ আম গাছে হরমোন এর অভাব হলে অনেক সময় আমের মুকুল ঝরে যায়। কারণ আমের মুকুল বের
হওয়ার সময় যে হরমোনটি বেশি প্রয়োজন হয় সেই হরমোনের অভাব দেখা দিলে অনেক মুকুল
ঝরে যায়। এজন্য আমের মুকুল বের হওয়ার পর বিশেষ করে আমের গুটি হওয়ার পর হরমোন
জাতীয় পণ্য স্প্রে করতে হবে। সেটা হতে পারে ফোরসিপিও অথবা পিজিআর অথবা
ট্রায়াকোন্টানল হরমোন।
বোরন সার স্প্রে করতে হবেঃ আম গাছে বোরন সারের অভাব হলে আমের মুকুল ঝরে যেতে পারে। আম গাছে মুকুল আসার আগে
বিভিন্ন ধরনের সার প্রয়োগ করতে হয় তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সার হলো বোরন
সার। যদি কোন আম গাছে বোরন সারের ঘাটতি হয় তাহলে সে গাছের মুকুল ঝরে যায়। তাই
মুকুল ঝরা রোধে তাৎক্ষণিকভাবে সলুবর বোরন স্প্রে করতে হবে।
ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবেঃ আমের মুকুল আসার পর আম গাছে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকের আক্রমণ হয়। এসব ছত্রাকের
কারণে এনথ্রাানোজ সহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। আমের মুকুল আসার পর এসব ছত্রাক অথবা
রোগ দেখা দিলে আমের মুকুল ঝরে যেতে পারে। তাই আমের মুকুল আসার শুরুতে কার্বনডাজিম
গ্রুপের ছত্রাক নাশক ১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
কার্বনডাজিম বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। যেমন-নোইন, অটোস্টিন,
আরবা, ছাবাত, বেভিস্টিন। এর মধ্য থেকে যেকোনো একটি অথবা যে কোন ভালো কোম্পানির
কার্বনডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক আম গাছে ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। আর
এভাবে স্প্রে করার মাধ্যমে আমের মুকুল ঝরা রোধ করা যায়।
আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবেঃ আমের জমিতে যদি কোন আগাছা থাকে অথবা আশেপাশে আগাছা থাকে সেগুলোকে পরিষ্কার করতে
হবে। কারণ আগাছের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু ও পোকামাকড় বসবাস করে। তাই যদি
আমের মুকুল আসার আগে আপনার আমের জমির এবং আশেপাশের আগাছা পরিষ্কার করতে পারেন
তাহলে আপনার আমের মুকুল তুলনামূলক কম ঝরবে।
ফুল ফোটা অবস্থায় কোন কিছু স্প্রে না করাঃ আম গাছের মুকুলের যখন ফুল ফোটে তখন বিভিন্ন ধরনের পতঙ্গ দ্বারা পরাগান হয়। যদি
ওই সময় কোন কিছু স্প্রে করা হয় তাহলে ওই পতঙ্গ গুলো মারা যায়। আর মারা যাওয়ার
কারণে পরাগায়ন হয় না। পরাগায়ন না হওয়ার কারণে আমের মুকুল ঝরে যেতে পারে। তাই
ফুল ফোটার সময় কোন কিছু স্প্রে না করাই ভালো।
আমের মুকুল আসার পর করণীয়
আপনার আম বাগানের আমের মুকুল আসার পর করণীয় কি জানেন কি। এই বিষয়টি না জানার
কারণে অনেকেরই আম গাছে প্রচুর পরিমাণে মুকুল আসে কিন্তু সেই মুকুল ঝরে যায়। যার
ফলে আপনি আর্থিকভাবে বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। চলুন জেনে নেওয়া যাক আম গাছে
মুকুল আসার পর কি কি কাজ করলে মুকুল ঝরবে না এবং প্রচুর পরিমাণে আম ধরবে।
আমের মুকুল আসার পর করণীয়ঃ
- আমের মুকুল আসার পর প্রথমে আম গাছে একটি ভালো মানের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে যেন আম গাছে হপার পোকা আক্রমণ না হয়।
- মুকুল আসার পর আম গাছে কোন ছত্রাকের আক্রমণ আছে কিনা লক্ষ্য করতে হবে।
- যদি আম গাছের কোন ছত্রাকের লক্ষণ দেখা যায় তাহলে ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।
- ছত্রাকনাশক হিসেবে আপনি কার্বনডাজিম গ্রুপের স্প্রে করতে পারবেন।
- আমের মুকুল আসার পর আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে জমিতে পর্যাপ্ত রস আছে কিনা, যদি রস না থাকে তাহলে অবশ্যই সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
- বৃষ্টিপাত না হলে ১৫ দিন অন্তর অন্তর দুই থেকে তিনবার পানি সেচ দিতে হবে।
- আমবাগানে নিয়মিত পরিদর্শন করতে হবে কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা লক্ষ্য রাখতে হবে।
- আম বাগানে থাকা সমস্ত আগাছা সুন্দরভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
- মুকুল আসার পর আম গাছে সলুবর বোরন ১ লিটার পানিতে দুই গ্রাম হাড়ে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
- আম গাছে মুকুল আসার পর যদি ঝড় বৃষ্টি হয় তাহলে ঝড়-বৃষ্টি শেষ হওয়া মাত্রই বাগান পরিদর্শন করতে হবে।
- ঝরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আমের মুকুল ঝরা প্রতিরোধের উপায়
আমের মুকুল ঝরা প্রতিরোধের উপায় উপায় সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকেরই জানা দরকার।
কারণ আপনি বাণিজ্যিকভাবেই হোক অথবা বাড়ির আশেপাশের শখ করেই হোক, আম গাছ লাগিয়ে
যদি আম না পান তাহলে সেটা অনেক কষ্টদায়ক। তাই প্রথমে আমাদের জানতে হবে আমের
মুকুল ঝরা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে। চলুন তাহলে এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে
নেওয়া যাক।
আমের মুকুল ঝরা প্রতিরোধের উপায়ঃ
- আম গাছে যেন কোন পোকা আক্রমণ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- মুকুল আসার পরে আম গাছে প্রচুর পরিমাণে হপার পোকার আক্রমণ হয়।
- আবার এই সময় এক ধরনের সাদা ছোট ছোট পোকার আক্রমণ হয়।
- এসব পোকার হাত থেকে রক্ষার জন্য ইমিডাক্লোরোপিড গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
- ইমিডাক্লোরোপিড গ্রুপের কীটনাশক ১ লিটার পানিতে এক মিলি হারে মিশিয়ে গাছ ভালোভাবে ভিজিয়ে করতে হবে।
- বাজারে যেসব ইমিডাক্লোরোপিড গ্রুপের কীটনাশক পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জাদীদ,ইমিটাফ, কনফিডর, টিডো এছাড়াও বাজারে প্রায় প্রত্যেকটি কোম্পানিরই এই গ্রুপের পণ্য আছে।
- আম গাছে মুকুল আসার সময় বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকের আক্রমণ হয়।
- এসব ছত্রাকের আক্রমণ যেন না হয় এর জন্য আপনাকে ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।
- ছত্রাক নাশকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মেনকোজেব অথবা কার্বেনডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক।
- আম গাছে মুকুল আসার সময় একটি হরমোন জাতীয় পণ্য স্প্রে করতে হবে।
- প্লানোফিস্ক জাতীয় হরমোন স্প্রে করলে প্রচুর পরিমাণে মুকুল আসে এবং মুকুল ঝড়ে কম।
- জমিতে পর্যাপ্ত রস আছে কিনা সেটা লক্ষ্য রেখে জমিতে সেচ প্রদান করতে হবে।
- আম গাছে কোন মরা ডাল বা শুকনো পাতা আছে কিনা সেগুলো থাকলে সরিয়ে ফেলতে হবে।
- আম বাগানে যেন আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- যে গাছে যত বেশি আলো বাতাস পাবে সে গাছে তত বেশি আমের মুকুল ও ফল হবে।
- বিভিন্ন সময় বোরন সার অথবা জৈব সারের অভাবে গাছের মুকুল ঝরে যেতে পারে।
- তাই মুকুল আসার পূর্বে আম গাছে জৈব সার ও বোরন সার প্রয়োগ করতে হবে।
- আম বাগানের মধ্যে যেন কোন প্রকার আগাছা বা গরু ছাগল প্রবেশ করতে না পারে সেগুলো লক্ষ্য রাখতে হবে।
আমের মুকুল আসার পর পরিচর্যা
আমের মুকুল আসার পর পরিচর্যা ভালোভাবে করতে না পারলে আমের মুকুল ঝরে যাবে এবং আম
হবে কম। যার কারণে আপনি হবেন ক্ষতিগ্রস্ত। তাই আমের মুকুল আসার পর কিছু পরিচর্যা
করতে হবে। আমের মুকুল আসার পর কি কি পরিচর্যা করতে হবে চলুন এই বিষয়ে যাবতীয়
সকল তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুনঃ
ডিসেম্বর মাসে কোন কোন সবজি চাষ করা যায়
আমের মুকুল আসার পর প্রথম যে কাজটি করতে হবে, তাহলে জমিতে রস পর্যাপ্ত পরিমাণে
আছে কিনা লক্ষ্য রাখতে হবে। মনে রাখবেন রস না থাকলে আমের মুকুল ঝরে যাওয়া
সম্ভাবনা বেশি থাকে। যদি রস না থাকে তাহলে পানি সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
দ্বিতীয়ত আপনি মুকুল আসার আগে সার ব্যবহার করেছেন কিনা এদিকে আপনাকে লক্ষ্য
রাখতে হবে।
মুকুল আসার সময় আম গাছে হপারপোকা সহ বিভিন্ন ধরনের প্রকার আক্রমণ হতে পারে। তাই
উক্ত সময় আপনাকে হপার পোকা সহ অন্যান্য পোকা যেন আক্রমণ না হয় ,তার দমন
ব্যবস্থা আপনাকে গ্রহণ করতে হবে। কারণ এ সময় হপার পোকার আক্রমণ হলে মুকুল সহ
আমের গুটি প্রচুর পরিমাণে ঝরে যায়। আর আমের মুকুল বা গুটি ঝরে গেলে ওই গাছে আর
আম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
যদি আপনার আম গাছে বোরন সার আগে থেকে দেওয়া থাকে তাহলে তো খুবই ভালো। আর যদি না
দেওয়া থাকে তাহলে সলুবর বোরন স্প্রে করতে হবে। গতবছর আম ভাঙ্গার পর আপনার আম
গাছে জৈব সার দেওয়া আছে কিনা, সে বিষয়টিকে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি না
দেওয়া থাকে তাহলে আমের গুটি মটর দানার মত হলে জমিতে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে।
আমের মুকুল আসার সময় বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকের আক্রমণ দেখা যায়। এসব ছত্রাকের
আক্রমণ হলে আমের মুকুল ঠিকমতো বেরোতে পারে না, আবার যদি বের হয় তাহলে
ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই মুকুল আসার আগে ও পরে অবশ্যই একটি ভালো মানের
ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে, যেন এসব ছত্রাক আক্রমণ না করতে পারে। আর ছত্রাকের
আক্রমণ না হলে স্বাভাবিকভাবেই আমের ফলন ভালো হয়।
আমের মুকুল ঝরে যাওয়ার কারণ
আমের মুকুল ঝরে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে অনেকেই সঠিক তথ্য জানতে চান। কারন আপনার
বাগানে প্রচুর পরিমাণে মুকুল আসার পরও কেন ঝরে যায় অনেকেই বুঝতে পারেন না। মুকুল
ঝরে যাওয়ার কারণে অনেক সময় কোন কোন গাছে একেবারেই আম হয়না। চলুন তাহলে জেনে
নেওয়া যাক আমের মুকুল ঝরে যাওয়ার সঠিক কারণ সম্পর্কে।
আমের মুকুল ঝরে যাওয়ার কারণঃ
- দিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য হলে আমের মুকুল ঝরে যেতে পারে।
- অর্থাৎ দিনে তাপমাত্রা বেশি এবং রাতে তাপমাত্রা কম হলে নিশ্চিতভাবে মুকুল ঝরে যায়।
- হপার পোকা সহ বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ হলে আমের মুকুল ঝরে যায়।
- আমের জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে আমের মুকুল ঝরে যেতে পারে।
- আমের মুকুল আসার সময় বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকের আক্রমণ হয়, এসব ছত্রাকের আক্রমণে আমের মুকুল ঝরে যেতে পারে।
- আমের মুকুল বের হওয়ার সময় অতিরিক্ত ঝড় বৃষ্টির কারণে আমের মুকুল ঝরে যেতে পারে।
- আমের মুকুল বের হওয়ার সময় অতিরিক্ত কুয়াশা হলে আমের মুকুল ঝরে যেতে পারে।
- আম গাছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান কমে গেলে আমের মুকুল ঝরে যেতে পারে।
- বিশেষ করে বোরন সারের ঘাটতি হলে আমের মুকুল ঝরতে পারে।
- আমের মুকুল বের হওয়ার সময় হরমোন জনিত সমস্যা হলে আমের মুকুল ঝরে যেতে পারে।
আমের মুকুল আসার আগে করনীয়
আমের মুকুল আসার আগে করনীয় কি আপনারা এই বিষয়ে অনেকেই জানতে চান। আমের মুকুল
আসার আগেই যদি সঠিকভাবে যত্ন করা যায় তাহলে আমের মুকুল যেমন ভালো হয় তেমনই আমের
ফলনও বেশি হয়। তাই আমাদের সবারই জানা থাকা দরকার আমের মুকুল আসার আগে করনীয় কি।
চলুন তাহলে এই বিষয়ে যাবতীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
আমের মুকুল আসার আগে করনীয়ঃ
- যদি আম গাছে মরা ডাল বা পাতা থাকে তাহলে সেগুলোকে ছেটে পরিষ্কার করতে হবে।
- আম গাছে যেন পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
- আম বাগানে কোন প্রকার আগাছা রাখা যাবে না অর্থাৎ সমস্ত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
- আম গাছে যেন কোন পোকার আক্রমণ না হয় এজন্য ল্যামডা-সাইহ্যালেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
- আম গাছে যেন কোন প্রকার ছত্রাকের আক্রমণ না হয় এজন্য ম্যানকজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
- মুকুল যেন সঠিকভাবে আসে এজন্য আম গাছে প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করতে হবে।
- বিশেষ করে অন্যান্য সারের পাশাপাশি আম গাছের জৈব সার ও বোরন সার প্রয়োগ করতে হবে।
- আম বাগানে যেন কোন প্রকার গরু ছাগল প্রকাশ করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- আম গাছের পাতা কালো হয়ে যাচ্ছে কিনা সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
আমের মুকুল কোন মাসে আসে
আমের মুকুল কোন মাসে আসে আপনারা এই বিষয় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান এই কারণে যে,
অনেক আম চাষী আছেন যারা শুধুমাত্র যে মাস থেকে আমের মুকুল আসা শুরু হয় সে মাস
থেকে আম গাছে পরিচর্যা শুরু করেন। তাই আপনাদের মাঝে অনেকেরই এই বিষয়টি জানার
খুবই আগ্রহ থাকে। চলুন তাহলে এই বিষয়ে যাবতীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
আমের মুকুল সাধারণত আমাদের দেশে ডিসেম্বর থেকে আসা শুরু হলেও জানুয়ারি এবং
ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি আমের মুকুল আসে। কারণ এই সময় বৃষ্টিপাত খুবই কম
হয়। আর বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে এই মাসে সবচেয়ে বেশি মুকুল বের হয়। যদি কোন
কারনে এই মাসে বৃষ্টিপাত হয় তাহলে অনেক ক্ষেত্রে মুকুল আসে না বা অনেক পরে আসে।
তাই আমরা এখান থেকে ধরেই নিতে পারি যে আমাদের দেশে আবহাওয়া অনুযায়ী মুকুল আসে
জানোয়ারী থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে। এই দুই মাসে হালকা শীত হালকা গরম থাকে আর আমের
মুকুল আসার জন্য এরকম আবহাওয়া হচ্ছে উত্তম আবহাওয়া। তাই বেশিরভাগ জাতের আমের
মুকুল জানোয়ারী থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে বের হয়। তবে কোনো কোনো জাতের আমের মুকুল
অন্যান্য মাসেও বের হতে পারে।
আমের মুকুল ঝরা রোধে করণীয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
আম গাছে মুকুল আসার আগে কি স্প্রে করতে হবে?
আম গাছে মুকুল আসার আগে সাইপারমেথ্রিন অথবা ল্যামড়া-সাইহ্যালোথ্রিন গ্রুপের
কীটনাশক স্প্রে করতে হবে, যেন কোন পোকার আক্রমণ না হয়। এছাড়াও আম গাছে যেন কোন
প্রকার ছত্রাকের আক্রমণ না হয়, এ কারণে ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাক নাশক স্প্রে
করতে হবে। আমের মুকুল বের হওয়ার জন্য মুকুল আসার আগে যে কোন হরমোন জাতীয় পণ্য
স্প্রে করলে খুবই সুন্দরভাবে মুকুল বের হয়।
আমের মুকুলের পোকা কি?
আমের মুকুলে সবচেয়ে বেশি যে পোকার আক্রমণ হয় সেই পোকার নাম হচ্ছে হপার পোকা।
আমের মুকুল বের হলে এই পোকার আক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়। এছাড়াও এ সময় অন্যান্য
শোষক পোকার আক্রমণ হতে পারে। আর এসব পোকা দমন করার জন্য ইমিডাক্লোরোপিড গ্রুপের
কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
আম গাছে কোন সার দিতে হয়?
একটি গাছের জন্য ১৬ টি খাদ্যের প্রয়োজন। তার মধ্যে আম গাছে কমপক্ষে ১২ টি খাদ্য
দেওয়ার প্রয়োজন। যেমন জৈব সার, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম,
সালফার, জিংক,বোরন, জিপসাম, কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন । এই সার গুলো প্রয়োজন
অনুযায়ী দিলে আম গাছে প্রচুর পরিমাণে মুকুল আসবে এবং ফল হবে।
আমের কি কি রোগ হয়?
আমের আঠা ঝরা রোগ
আমের ফল ফেটে যাওয়া রোগ
আমের আগা মরা রোগ
আমের সুটিমোল্ড রোগ
আমের বোটা পচা রোগ
আমের দাঁদ রোগ
আমের লাল মরিচার রোগ
আমের গুটি কখন ঝরে?
আমাদের দেশে সাধারণত আমের গুটি ঝরে মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে। কারণ এই সময়
বৃষ্টিপাত কম হয় জমিতে রস থাকে না। জমির রস শুঁকিয়ে যাওয়ার কারণে এবং অন্যান্য
কারণে আমের গুটি ঝরে যায়। তাই আপনি যদি মার্চ এপ্রিল মাসে আম গাছে সেচ প্রদান
করতে পারেন তাহলে আমের গুটি কম ঝরবে।
শেষ কথাঃ আমের মুকুল ঝরা রোধে করণীয় কি জেনে নিন
আমের মুকুল বিভিন্ন কারণে ঝরতে পারে, যেমন জমিতে রস না থাকার কারণে, ছত্রাকের
আক্রমণে, পোকার আক্রমণে, আমের জমিতে পুষ্টির অভাবে, আমের জমিতে হরমোনের অভাব হলে
আমের মুকুল ঝরতে পারে। তাই এই বিষয়গুলো যদি আমরা আগে থেকেই লক্ষ রাখি এবং সে
অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে স্বাভাবিকভাবে বলা যায় আমের গুটি ঝরা রোধ
হবে।
এছাড়াও আমের গুটি ঝরা রোধ করার জন্য মুকুল আসার আগে আম গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে
সার প্রয়োগ করতে হবে। বিশেষ করে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া যেন আম গাছে
কোন প্রকার রোগ ও পোকার আক্রমণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের এই
ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের তথ্যমূলক পোস্ট পাবলিস্ট করা হয়। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ
তথ্য সমৃদ্ধ পোস্ট পেতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
এট্রাকশন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url