রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয় কি - রাসেল ভাইপারের এন্টিভেনম
বর্তমানে আমাদের দেশে রাসেল ভাইপার সাপের আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রাসেল
ভাইপার কামড়ালে করণীয় কি এই বিষয়ে আপনারা অনেকেই জানতে চান। রাসেল ভাইপার
সাপ কামড়ানোর পর কি করতে হবে এই বিষয়ে সকল যাবতীয় সঠিক তথ্য এই
আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন।
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা আরো জানতে পারবেন রাসেল ভাইপার থেকে বাঁচার
উপায়, রাসেল ভাইপার চেনার উপায় ও রাসেল ভাইপার সম্পর্কিত যাবতীয়
সকল তথ্য। বিষয়গুলো ভালোভাবে জানতে এবং বুঝতে এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত
পড়ুন। আশা করি আপনি একটু হলেও উপকৃত হবেন।
পোস্ট সূচীপত্রঃ রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয় কি - রাসেল ভাইপারের এন্টিভেনম
- রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয় কি
- রাসেল ভাইপারের এন্টিভেনম
- রাসেল ভাইপার থেকে বাঁচার উপায়
- রাসেল ভাইপার চেনার উপায়
- রাসেল ভাইপার উত্তেজিত হলে কি করে
- রাসেল ভাইপার কিভাবে বাচ্চা দেয়
- রাসেল ভাইপার কামড়ের চিকিৎসা
- রাসেল ভাইপার কি বিষাক্ত
- রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয় কি বিষয়ে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
- শেষ কথাঃ রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয় কি জেনে নিন
রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয় কি
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ রাসেল ভাইপার কামড়ালে
করণীয় কি সম্পর্কে জানতে চায়। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে
রাসেল ভাইপারের আক্রমন অনেক বেশি বেড়ে গেছে। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের
সবচেয়ে বিষধর সাপ হচ্ছে রাসেল ভাইপার।এই সাপের আক্রমণের কারণে
প্রতিনিয়ত মানুষ মারা যাচ্ছে। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক রাসেল ভাইপার
কামরালে আমাদের করণীয় কি।
আরো পড়ুনঃ
মোবাইলে বিরক্তিকর এড বন্ধ করার উপায়
রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয়ঃ
১. কামড়ানো অংশ নড়াচড়া করা যাবে নাঃ রাসেল ভাইবার আপনার
শরীরের যে অংশে কামড়িয়েছে সে অংশ কোনভাবেই নড়াচড়া করা যাবে
না।যদি হাতে দংশন করে তাহলে সে হাত নড়াচড়া করা যাবে না।যদি পায়ের
কোন অংশে দংশন করে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে হাঁটাচলা বন্ধ করতে হবে।নড়াচড়া বা
হাঁটাচলা করার কারণে রাসেল ভাইপারের বিষ দ্রুত রক্তের সাথে মিশে
যাবে। আর রক্তের সাথে মিশে গেলে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
২. আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার করে ধৌত করতে হবেঃ আপনার শরীরে যে
অংশে রাসেল ভাইবার আক্রমণ করেছেন সে অংশ নড়াচড়া না করে আলতোভাবে সাবান দিয়ে
পরিষ্কার করে ধৌত করতে হবে। এবং ধৌত করা অংশ পরিষ্কার ভেজা কাপড় দিয়ে
আলতোভাবে মুছতে হবে যেন ঐ অংশ নড়াচড়া না করে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
৩. আক্রান্ত রোগীকে আশ্বস্ত করতে হবেঃ রাসেল ভাইপারে
কামড়ানো রোগীকে প্রথমেই আশ্বস্ত করতে হবে যে সাপে কামড়ালে মানুষ
মারা যায় না। বিশেষ করে রাসেল ভাইপারের এন্টিভেনোম আছে তাই এই সাপের
কামড়ে মৃত্যু হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এভাবে রাসেল ভাইপারে কামড়ানো
রোগীকে আশ্বস্ত করে রোগীর মনে সাহস জোগাতে হবে।
৪. শরীরে কোন জিনিস থাকলে দ্রুত খুলে ফেলতে হবেঃ রাসেল
ভাইপার কামড়ানো রোগীর শরীরের কোন প্রকার ঘড়ি, অলংকার, চুরি, আংটি
নুপুর, তাবিজ বা আটোসাটো পোশাক এই জাতীয় কোন কিছু থাকলে দ্রুত খুলে ফেলার
ব্যবস্থা করতে হয়। এগুলো থাকার কারণে দ্রুত বিষ ছড়িয়ে যেতে পারে।
৫. আক্রান্ত স্থানে কোন কিছু করা যাবে নাঃ আক্রান্ত স্থানে কোন
কিছু দিয়ে কেটে বিষ বের করার চেষ্টা করবেন না। আক্রান্ত স্থানে সুই
ফোটাবেন না
৬. আক্রান্ত স্থানে কোন কিছু লাগাবেন নাঃ রাসেল ভাইপার দ্বারা
আক্রান্ত স্থানে কোন কিছুর প্রলেপ লাগাবেন না। বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ে অনেক
ব্যক্তি বিভিন্ন গাছের অংশ পিসে লাগানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যা কোন
ভাবে করা যাবে না।
৭. ওঝার কাছে যাওয়া যাবে নাঃ রাসেল ভাইপার কামড়ালে কখনোই ওঝার
কাছে যাবেন না। কারণ ওঝা কখনো বিষ নামাতে পারে না। রোগীকে বাঁচাতে
চাইলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
৮. আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুয়ে রাখুনঃ আক্রান্ত ব্যক্তিকে কাত
করে শুয়ে রাখতে হবে এবং নড়াচড়া করা যাবে না।
৯. নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে কৃতিমভাবে ব্যবস্থা করতে হবেঃ আক্রান্ত রোগীর শরীরে যদি আগে থেকে এলার্জি বেশি থাকে তাহলে
নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। এরকম সমস্যা মনে হলে কৃত্রিমভাবে নিঃশ্বাস
নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. অযথা সময় নষ্ট করবেন নাঃ রাসেল ভাইপার আক্রমণের পর সাপটি
মেরে ফেলতে হবে এই চিন্তা ভাবনা করে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।যত দ্রুত
সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
১১. হাসপাতালে কামড়ানো সাপকে সঙ্গে নিতে হবেঃ সাপ কামড়ানোর
পর যদি সাপকে দ্রুত মেরে ফেলা যায় তাহলে রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় সঙ্গে
উক্ত সাপকে নিতে হবে। এতে করে ডাক্তারেরা দ্রুত সঠিক পরামর্শ দিতে পারবে।
১২. আক্রান্ত স্থান বেধে ফেলতে হবেঃ যদি হাতে অথবা পায়ে সাপ
দংশন করে থাকে তাহলে উক্ত হাত বা পা থেকে যেন বিষ অন্য দিকে ছড়িয়ে না পড়ে
এজন্য আক্রান্ত স্থানের একটু উপরে কাপড় দিয়ে শক্ত করে বেধে
রাখতে। হাসপাতালে না যাওয়া পর্যন্ত এভাবে বেঁধে রাখতে হবে।
১৩. গ্রাম্য ডাক্তারের পরামর্শঃ রাসেল ভাইপার কামড়ানোর
পর গ্রাম্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়া যাবে না। অনেক সময়
বিভিন্ন ধরনের গ্রাম্য ডাক্তার বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেটা
কখনোই করা যাবে না।
১৪. আক্রান্ত রোগীকে কথা কম বলতে হবেঃ সাপে কাটা আক্রান্ত
রোগীকে সবসময় কথা কম বলতে হবে। চেষ্টা করতে হবে যতটুকু কম কথা বলা যায়
এবং আক্রান্ত রোগীকে আশ্বাস দিতে হবে যে আপনার কিছুই হবে না।
১৫. কোন কিছু খাওয়ানো যাবে নাঃ রাসেল ভাইপারে আক্রান্ত
রোগীকে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন কিছু খাওয়ানো যাবে না। অর্থাৎ সাপের
কামড়ানোর পর পরই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে এবং কোন কিছু খাওয়ানোর আগে
ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
রাসেল ভাইপারের এন্টিভেনম
রাসেল ভাইপারের এন্টিভেনম সকল সরকারি হাসপাতালে আছে কিনা আপনারা অনেকেই
জানতে চান। এক্ষেত্রে আপনাদের এজন্য সুখবর হচ্ছে এখন বাংলাদেশের প্রতিটি
হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে রাসেল ভাইপারের এন্টিভেনম মজুদ আছে। যেহেতু দিন দিন
রাসেল ভাইপারের আক্রমণ বেড়েই চলেছে তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে এন্টিভেনম না
থাকলে এই সমস্যাটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। তাই আমাদের দেশের স্বাস্থ্য
ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ সামন্ত লাল সেন।
আরো পড়ুনঃ
কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক
গত ২২ জুন ২০২৪ সালে ঘোষণা দিয়েছেন যেন প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে
পর্যাপ্ত পরিমাণে রাসেল ভাইপার এর এন্টিভেনম মজুদ থাকে। সেই ঘোষণা
অনুযায়ী প্রায় প্রতিটি সরকারের হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে রাসেল ভাইপার
সহ অন্যান্য সকল বিষাক্ত সাপের এন্টিভেনম মজুদ রাখা হয়েছে। রাসেল
ভাইপারের আন্টিভেনমের এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইনসেপ্টা
কোম্পানির একটি পণ্য আছে যার নাম হচ্ছে এন্টিভেনম।
রাসেল ভাইপার থেকে বাঁচার উপায়
আপনারা অনেকেই রাসেল ভাইপার থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে
চান। এখন আমি আলোচনা করবো রাসেল ভাইপার থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে
সঠিক তথ্য। রাসেল ভাইপার হলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে সবচেয়ে
বিষধর একটি সাপ। এই সাপ পানিতে বেশি অবস্থান করে এবং পানির মাধ্যমে
বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের নিম্ন অঞ্চল বিশেষ করে নদী
এলাকায় এর প্রবণতা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ
রক্তশূন্যতার লক্ষন ও প্রতিকার
রাসেল ভাইপার মূলত ভারত থেকে আমাদের দেশে দিন দিন ছড়িয়ে
পড়ছে। ইতিমধ্যেই কয়েকজন এই সাপের কামড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।বলতে
গেলে বর্তমানে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম হচ্ছে রাসেল ভাইপার। এই সাপটি মূলত
যেখানে পানি জমে থাকে সেসব জায়গায় বেশি অবস্থান করে। এরা ইচ্ছে করে কখনো
মানুষকে কামড়ায় না। তবে মানুষকে দেখে ভয়ে অথবা বিপদ মনে করে
মানুষকে দংশন করে থাকে। এই সাপ যেন আমাদের কামরাতে না পারে অর্থাৎ এই
সাপের হাত থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে নেওয়া যাক
রাসেল ভাইপার থেকে বাঁচার উপায় সমুহঃ
- যেসব এলাকায় রাসেল ভাইপার এর সন্ধান পাওয়া গেছে এসব এলাকায় কম চলাচল করা অথবা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে চলাচল করা।
- বাড়ি চারপাশ ঝোপ জঙ্গল ও আগাছা মুক্ত করে পরিষ্কার রাখা।
- লম্বা আগাছা, ঝোপঝাড়, পানিযুক্ত কৃষি এলাকা চলাচল করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ এসব জায়গায় রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে।
- মাছ ধরার জন্য বা কৃষি কাজ করার জন্য গর্তের ভিতর হাত অথবা পা ঢুকাবেন না, কারণ এখন বেশিরভাগ কৃষি জমির গর্তের ভিতর রাসেল ভাইপার অবস্থান করে।
- যেসব এলাকায় রাসেল ভাইপারের উপস্থিতি দেখা গেছে সেসব এলাকায় রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চলাইট ব্যবহার করতে হয়।
- দীর্ঘদিন থেকে পড়ে আছে এমন পতিত গাছ, রান্না করার জন্য খড়ি এবং এক জায়গায় জমানো কোন কিছু সরানোর সময় ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে ভেতরে সাপ আছে কিনা।
- সাপ দেখামাত্রই ধরা অথবা মারার জন্য চেষ্টা করবেন না।
- প্রয়োজন হলে ৩৩৩ নম্বরে কল করে নিকটস্থ বন বিভাগে অবহিত করুন।
রাসেল ভাইপার চেনার উপায়
যেহেতু বর্তমানে একটি আতঙ্কের নাম হচ্ছে রাসেল ভাইপার, তাই অনেকই রাসেল ভাইপার
চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে চান। চলুন তাহলে রাসেল ভাইপার চেনার সবচেয়ে
সহজ উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। ভারতে এই সাতটি চন্দ্রবোড়া বা
উলুবরা নামে পরিচিত। এই সাপটি আকারে প্রায় ৫.৫ ফিট লম্বা হয়ে থাকে।
ত্রিভুজ আকৃতির চ্যাপ্টা মাথা ঘাড় থেকে প্রায় আলাদা। মুখের সামনের অংশ
একেবারে গোলাকার ভোতা ও উপরের দিকে একটু বাঁকানো।
নাকের ছিদ্র বড় এবং মাথার শীর্ষবিন্দু প্রায় খন্ডিত আবরণে
আচ্ছাদিত। রাসেল ভাইপারের মাথা আকারে একটু বড় এবং এর রং হলুদ বা
সোনালী বর্ণের। ২ জোড়া চোয়ালের ঢালের মধ্যে সামনের অংশ সামান্য একটু বেশি
প্রসারিত। মুখের ভিতর দুইটি ম্যাক্সিলারী হাড়ের সঙ্গে একজোড়া করে মোট
ছয়টি বিষ দাত আছে। সামনের জোড়া দাঁতগুলো বেশ বড় এবং সক্রিয় থাকে। এই
সাপের লেজ সাধারণত পুরো দেহের প্রায় ১৪ শতাংশ। শরীরের দৈর্ঘ্য বরাবর ৩
সাড়ি গারো বাদামী দাগ আছে।
রাসেল ভাইপার উত্তেজিত হলে কি করে
বর্তমানে আমাদের উপমহাদেশের সবচেয়ে বিষধর সাপ হচ্ছে রাসেল ভাইপার। এইসব সহজে
মানুষকে কামড়াতে চায় না। কিন্তু কোন মানুষ বা অন্য কিছুকে যদি তার
বিপদ মনে করে তাহলে তাকে সে কামড় দেয়। রাসেল ভাইপার যে প্রানীর উপর
উত্তেজিত হয় সেই প্রানীকে সে দ্রুত কামড় দেয়। অর্থাৎ আত্মরক্ষার
জন্য সে দংশন করে এবং তার ভিতরে থাকা বিষ মানুষ বা অন্যান্য প্রানির
গায়ে দংশনের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োগ করে থাকে। উক্ত প্রাণীকে দ্রুত
চিকিৎসা না দিলে সে মারা যায়।
রাসেল ভাইপার কিভাবে বাচ্চা দেয়
সাধারণত আমাদের দেশে বা সারা বিশ্বের যে সাপগুলো রয়েছে সেগুলো প্রায় সবগুলাই
ডিম পাড়ে এবং সে ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়। কিন্তু রাসেল ভাইপার একটু
ব্যতিক্রম। অর্থাৎ এই সাপটি ডিম না পেরে সরাসরি বাচ্চা প্রসব
করে। অন্যান্য সাপ যেখানে সর্বোচ্চ ২০ টি ডিম পাড়ে। সেখানে
রাসেল ভাইপার ২০ থেকে ৪০টি বাচ্চা প্রসব করতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে
৮০টি বাচ্চা প্রসব করতে পারে। এক কথায় রাসেল ভাইপার বংশ বিস্তারের জন্য
দ্রুত বাচ্চা প্রসব করতে পারে।
রাসেল ভাইবার কামড়ের চিকিৎসা
রাসেল ভাইয়ের কামড়ালে কি চিকিৎসা করতে হবে চলুন এ বিষয়ে জেনে নেওয়া
যাক। রাসেল ভাইপার এমন একটি বিষাক্ত সাপ যে সাপ কামড়ালে মানুষ দ্রুত
মারা যায়। অর্থাৎ এই সাপের বিষ মানুষের রক্তে প্রবেশ করে দ্রুত রক্ত জমাট
বাঁধিয়ে দেয়। যার ফলে অতি দ্রুত রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আর
রক্ত চলাচল বন্ধ হওয়ার কারণে মানুষ দ্রুত মারা যায়। তাই রাসেল ভাইপার
কামানোর সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
রাসেল ভাইবার কামড়ের চিকিৎসা সমুহঃ
- আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে ধুতে হবে।
- আক্রান্ত স্থান যত সম্ভব নিচে রাখার চেষ্টা করতে হবে, যেন বিষ সমস্ত শরীরের ছড়িয়ে না পড়ে।
- সাপে কামড়ানো ব্যক্তিকে শান্ত এবং স্থির থাকতে হবে, বেশি নড়াচড়া করার কারণে বিষ দ্রুত সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে।
- আক্রান্ত স্থান থেকে চুষে বা উক্ত স্থানে ক্ষত করে বিষ বের করার চেষ্টা করবেন না।
- অযথায় ওঝার কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করবেন না।
- যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
- হাসপাতালে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে এন্টিভেনাম প্রয়োগ করা হবে, এবং রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী ডাক্তারেরা বিভিন্ন পরামর্শ দিবেন।
রাসেল ভাইপার কি বিষাক্ত
সারা বিশ্বে বিভিন্ন রকমের সাপ আছে। তেমনি আমাদের দেশসহ উপমহাদেশে নদ-নদী
ও খাল বিল বেশি থাকায় সাপের সংখ্যা অনেক বেশি আছে। আমাদের
উপমহাদেশে সবচেয়ে বেশি বিষধর যে সাপগুলো আছে তার মধ্যে রাসেল ভাইপার হলো
অন্যতম। কারণ অন্যান্য বিষাক্ত সাপ কামড়ালে ধীরে ধীরে ওইসব সাপের বিষ
মানুষের শরীরের প্রবেশ করে এবং মানুষকে অসুস্থ করে দেয়।
কিন্তু রাসেল ভাইপার কামড়ালে মানুষ দ্রুত মারা যায়। কারন এটি
মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধিয়ে রক্ত চলাচলে বাধা প্রদান করে। যার
ফলে দ্রুত চিকিৎসা না নিলে মানুষের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে মানুষ মারা যেতে পারে।
এবং এই সাপের বিষ যে রক্তগুলোকে জমাট বাধিয়ে ফেলে সেই রক্তগুলো আর
স্বাভাবিক হয় না অর্থাৎ ওই অবস্থায় রয়ে যায়। আর এই জন্যই এই
সাপকে উপমহাদেশের সবচেয়ে বিষধর সাপ বলা হয়ে থাকে।
রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয় কি বিষয়ে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয়?
রাসেল ভাইপার কামড়ালে দ্রুত মানুষ মারা যায়। কারণ রাসেল ভাইপার এমন
একটি বিষধর সাপ এই সাপের বিষ মানুষের শরীরে প্রবেশ করা মাত্রই মানুষের শরীরের
রক্ত জমাট বাধতে শুরু করে। যদি বেশিক্ষণ এই এই বিষ শরীরের ভেতর থাকে তাহলে
রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আর রক্ত জমাট বাঁধার কারণে এবং রক্ত চলাচল না
হওয়ার কারণে রোগী দ্রুত মারা যায়। তাই রাসেল ভাইপার কামড়ানো সঙ্গে
সঙ্গে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করতে হবে।
সাপে কামড়ালে কোন ঔষধ টা ভালো?
আপনারা অনেকেই সাপ কামড়ানোর পর চিন্তাভাবনা করেন কোন ওষুধ খাওয়াবেন, বা
খোঁজাখুঁজি করেন কোন ঔষধ টা ভালো। আসলে সাপে কামড়ানোর একমাত্র ওষুধ হচ্ছে
এন্টিভেনম। কারণ সাপে কামড়ানোর ফলে মানুষের শরীরে বিষ প্রবেশ
করে। সেটাকে দ্রুত নষ্ট করার জন্য একমাত্র ওষুধ হলো
এন্টিভেনম। তাই সাপে কামড়ানো রোগীকে অন্য কোন ওষুধ খাওয়াবেন না দ্রুত
হাসপাতালে ভর্তি করাবেন, এবং শরীরের এন্টিভেনম প্রয়োগ করার ব্যবস্থা করবেন।
সাপে কামড়ালে প্রাথমিক চিকিৎসা কি?
সাপের কামড়ানোর প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে আক্রান্ত স্থান নড়াচড়া কম করতে হবে,
আক্রান্ত স্থানে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে রাখতে হবে, সাপের বিষ যেন সমস্ত
শরীরে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য ব্যান্ডেজ ব্যবস্থা করতে হবে। সাপে
কামড়ানোর পর কোনভাবেই উত্তেজিত হওয়া যাবে না। সাপে কামড়ানো রোগীকে
স্থির থাকতে হবে। সাপে কামড়ানো অংশে চুষে বিষ বের করার চেষ্টা করা যাবে
না বা উক্ত স্থানে কোন ক্ষত করা যাবে না। সাপে কামড়ানো স্থান যত
সম্ভব নিচু করে রাখতে হবে যেন বিষ সমস্ত শরীরের না ছড়িয়ে পড়ে।
রাসেল ভাইপার কি কোবরা থেকেও বেশি বিষাক্ত?
রাসেল ভাইপার অবশ্যই কোবরা থেকে বেশি বিষাক্ত। কারণ কোবরা কামড় দিলে উক্ত
রোগী দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকে। কিন্তু রাসেল ভাইপার কামড়ানো রোগী
দ্রুত চিকিৎসা না নিলে অল্প সময়ের মধ্যে মারা যায়। কোবরা দংশন করলে সেই
বিষ ধীরে ধীরে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে মানুষকে মেরে ফেলে।
কিন্তু রাসেল ভাইপারের বিষ দ্রুত শরীরে প্রবেশ করে এবং রক্ত জমাট বাঁধিয়ে
রক্ত চলাচলে বাধা প্রদান করে। যার ফলে মানুষ তাড়াতাড়ি মারা
যায়। তাই বলা যায় রাসেল ভাইপার কোবরা থেকেও বেশি বিষাক্ত।
সাপে কামড়ালে করণীয় ও বর্জনীয়
সাপে কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে স্থির হতে হবে এবং নড়াচড়া কম করতে হবে।
আক্রান্ত স্থানে বিষ বের করার নামে কোন প্রকার ক্ষত সৃষ্টি করা যাবে
না।
সাপে কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আংটি চুরি সোনার গহনা ঘড়ি এই সমস্ত জিনিসপত্র
খুলে ফেলতে হবে।
ওঝার কাছে গিয়ে কোনভাবেই সময় নষ্ট করা যাবে না।
দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে এন্টিভেনম প্রয়োগ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
শেষ কথাঃ রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয় কি জেনে নিন
উপরের আলোচনা থেকে আপনারা জানতে পারলেন রাসেল ভাইপার কামড়ালে করণীয় কি ও
রাসেল ভাইপারের এন্টিভেনম সম্পর্কে যাবতীয় সকল তথ্য। আশা করি আপনি
বিষয়গুলোই ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। বর্তমান উপমহাদেশের সবচেয়ে বিষধর সাপ
হচ্ছে রাসেল ভাইপার। এই সাপ মূলত ভারতে বেশি দেখা গেলেও বর্তমানে
বাংলাদেশে এর প্রভাব ধীরে ধীরে বেশি হচ্ছে । পানিতে এদের অবস্থান বেশি
হওয়ার কারণে বন্যার পানির সাথে দ্রুত এরা বাংলাদেশের প্রবেশ করছে।
ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের কয়েকটি জেলাতে এই সাপের অবস্থান দেখা গেছে। রাসেল
ভাইপারের আক্রমণে বেশ কয়েকজন লোক আমাদের দেশে মারা গেছে। আজকের এই
আর্টিকেলটিতে রাসেল ভাইপার চেনার উপায়, রাসেল ভাইপার থেকে বাঁচার
উপায় ও রাসেল ভাইপার আক্রমণ করলে প্রাথমিকভাবে করনীয় কি সেগুলো খুবই
সুন্দর ভাবে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। যেগুলো আপনি পোস্টটি সম্পন্ন
পড়ার মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন।
লেখক হিসেবে আমার পরামর্শ হচ্ছে আপনারা অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করে
চলবেন। কারণ বর্তমান সময় হচ্ছে বর্ষাকাল এই সময়ে এই সাপের উপদ্রব খুব
বেশি দেখা যায়। তাই চলাচল করার সময় এবং কৃষি কাজ করার সময় খুব ভালোভাবে
লক্ষ্য করতে হবে। সতর্কতা অবলম্বন করলে আশা করি এই সাপের আক্রমণ থেকে
রক্ষা পাওয়া যাবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কিত সঠিক তথ্য
জানতে আমাদের এই সাইটের সঙ্গে থাকুন। কারণ এই সাইটে নিয়মিত এরকম
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পাবলিশ করা হয়।
এট্রাকশন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url