তরমুজের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা - ভালো তরমুজ চেনার উপায়
প্রতিদিন তরমুজ বীজ খেলে আপনি যেমন অনেক পুষ্টি উপাদান পাবেন। তেমনি বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবেন। তরমুজের বিচি খাওয়ার নিয়ম কি। কিভাবে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এই বিষয়ে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো, পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়লে আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ তরমুজের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা। ভালো তরমুজ চেনার উপায়
- তরমুজের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা
- ভালো তরমুজ চেনার উপায়
- তরমুজের বিচি খাওয়ার নিয়ম
- তরমুজ খেলে কি ওজন বাড়ে
- তরমুজ খাওয়ার নিয়ম জানুন
- তরমুজ এর অপকারিতা জানুন
- তরমুজ ভায়াগ্রা হিসেবে কাজ করে
- প্রতিদিন কতটুকু তরমুজের বীজ খাওয়া উচিত
- খালি পেটে তরমুজ খেলে কি হয়
- শেষ কথাঃ তরমুজের বিচি কিভাবে উপকার ও অপকার করে
তরমুজের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা
তরমুজের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা অনেকে জানতে চান। তরমুজ সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানেন কিন্তু তরমুজের বিচি সম্পর্কে আমার মনে হয় অনেকেই খুব বেশি জানেন না। তরমুজের বিচি খেলে কি হবে। এটা কি কোন কাজের না অকাজের। চলুন বিষয়টি সুন্দর ও সহজভাবে জেনে নেওয়া যাক।
গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশের জনগণের জনপ্রিয় ফল হচ্ছে তরমুজ। এসময় আমাদের দেশের বাজারে প্রচুর পরিমাণে তরমুজ পাওয়া যায়।আমাদের শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে আমরা তরমুজ খেয়ে থাকি। কিন্তু তরমুজ খাওয়ার সময় আমরা বেশিরভাগই তরমুজের বীজ ফেলে দিই। অথবা তরমুজ খাওয়ার সময় মুখের ভেতর তরমুজের বীজ পড়লে আমরা বিরক্ত বোধ করি।
কিন্তু আপনি জানেন কি, তরমুজের বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে, তরমুজের বিচি
খেলে আমাদের শরীরে কি কি উপকার হয় অথবা কি কি অপকার হয়। তরমুজের
পাশাপাশি তরমুজের বিচি আমাদের শরীরের অনেক উপকার ও অপকার করে থাকে।
যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক সুবিধা অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তরমুজের বিচিতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন
মরণব্যাধি রোগ হতে রক্ষা করে। যদি আপনি তরমুজের বীজ নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে
আপনি বিভিন্ন রোগের হাত থেকে নিশ্চিত ভাবে রক্ষা পেতে পারেন। সেইসাথে এই বীজ
খেলে কি কি সমস্যা হতে পারে। চলুন এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
প্রথমে তরমুজের বিচির উপকারিতা জেনে নেওয়া যাকঃ
-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ তরমুজের বীজে রয়েছে মানুষের জন্য উপকারী
জিংক। তরমুজের বীজ নিয়মিত খেলে আপনার শরীরের জিংকের ঘাটতি পূরণ হবে। জিংকের
ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে।
তাই আপনি যদি নিয়মিত তরমুজের বিচি খান তাহলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
কয়েক গুণ বাড়িয়ে যাবে।
- ত্বক ও চুল ভালো রাখেঃ তরমুজের বীজে বিদ্যামান রয়েছে প্রোটিন ও অত্যবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড, যে পুষ্টি উপাদানগুলো মানুষের শরীরের ত্বক ও চুল সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। যদি আপনি নিয়মিত তরমুজের বিচি খেতে পারেন তাহলে আপনার ত্বক ও চুল উভয়ই খুবই ভালো থাকবে।
- হাড় গঠন ও মজবুত করেঃতরমুজের বীজ আমরা অবহেলা করে ফেলে দিলেও এর মধ্যে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। যা প্রতিটি মানুষের হার গঠন করতে সাহায্য করে ও পেশির কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই যদি আপনি তরমুজের বীজ নিয়মিত খান তাহলে আপনার হাড় হবে মজবুত। এছাড়াও তরমুজের বীজ খেলে আপনার স্নায়ুও সচল হবে।
-
হার্ট ভালো রাখেঃ তরমুজের বিচিতে আছে প্রয়োজনীয় ম্যাগনেসিয়াম।
যা মানুষের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই যদি নিয়মিত আপনি তরমুজের
বীজ খান তাহলে নিশ্চিতভাবে আপনার হার্ট ভালো থাকবে।
-
হজম শক্তি বাড়ায়ঃ তরমুজের বিচিতে আছে প্রয়োজনীয় পরিমাণ আঁশ এবং
অপরিশোধিত চর্বি। তরমুজের বীজে এসব উপাদান থাকার কারণে পেট পরিষ্কার থাকে এবং
হজম শক্তি তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়।
-
রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ প্রচুর পরিমানে আয়রন সমৃদ্ধ একটি উপাদান
হচ্ছে তরমুজের বিচি। তরমুজের বিচিতে আয়রন থাকার কারণে রক্তস্বল্পতা দূর
করতে এটি খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
-
ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ তরমুজের বিচিতে আছে প্রচুর পরিমাণে লাইসোপেন।
টমেটোতে যে পরিমাণ লাইসোপেন পাওয়া যায় তার চেয়ে প্রায় অনেক বেশি লাইসোপেন
পাওয়া যায় তরমুজের বিচিতে। লাইসোপেন আমাদের শরীরে শক্তিশালী
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি করতে সাহায্য করে। যা আমাদের শরীরের ক্যান্সার
প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
-
রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করেঃ তরমুজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ
বিদ্যামন রয়েছে। আর আমরা সবাই জানি ভিটামিন এ -এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। যদি
আপনি নিয়মিত তরমুজের বিচি খান তবে রাতকানা রোগ হতে বা চোখের সমস্যা হতে দ্রুত
মুক্তি পাবেন।
-
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ তরমুজের বিচিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান
বিদ্যামান রয়েছে তা হল লাইসিন। যে উপাদানটি ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে খুবই
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যদি আপনার নিয়মিত তরমুজের বিচি খান
তাহলে ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকবেন আশা করি।
-
প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায়ঃ তরমুজের বিচিতে আছে প্রচুর পরিমাণে
ম্যাঙ্গানিজ ও জিংক। যা পুরুষের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রজনন ক্ষমতা
বাড়ায় ও পুরুষের শুক্রাণুর মান বাড়ায়। নিয়মিত তরমুজের বিচি খান এবং
প্রজনন ক্ষমতা বাড়িয়ে নিন।
এবার জেনে নেওয়া যাক তরমুজের বিচির অপকারিতা
- তরমুজের বিচিতে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। যদি আপনার পাকস্থলীতে সমস্যা থাকে তাহলে আপনার তরমুজের বিচি না খাওয়াই ভালো। এতে করে আপনার উপকার চেয়ে ক্ষতি বেশি হতে পারে।
-
তরমুজের বিচি খেলে অনিমত পায়খানা হতে পারে। অর্থাৎ যদি আপনি নিয়মিত তরমুজের
বিচি খান অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত তরমুজের বিচি খান তাহলে ঘন ঘন পায়খানা
হতে পারে।
-
তরমুজের বিচিতে আছে এলার্জিক উপাদান। যাদের শরীরে অ্যালার্জি আছে তারা
যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত তরমুজের বিচি খান তাহলে তাদের শরীরে অ্যালার্জি
সমস্যা দেখা যেতে পারে।
ভালো তরমুজ চেনার উপায়
-
তুলনামূলকভাবে গোল অথবা ওভাল আকৃতির তরমুজ নির্বাচন করুন। কারণ তরমুজ
যদি গোল বা ওভাল আকৃতির না হয় তাহলে সে তরমুজ মিষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম
থাকে। ভালো তরমুজ চেনার উপায় গুলোর মধ্যে এটি একটি পদ্ধতি।
-
পাকা তরমুজের গায়ে হলুদ ছোপ দাগ থাকে। তাই তরমুজ কেনার আগে দেখে নিন তরমুজের
গায়ে হলুদ ছোপ ছোপ দাগ আছে কিনা। যদি এরকম দাগ থাকে তাহলে বুঝবেন যে এই
তরমুজটি পাকা ও মিষ্টি।
-
সাধারণত পরিপক্ক তরমুজ মিষ্টি বেশি হয়। তরমুজ কেনার সময় দেখে নিন তরমুজের
ওজন কেমন। যদি ওজন কম হয় তাহলে বুঝবেন সে তরমুজ এখনো পরিপক্ক হয়নি। অর্থাৎ
ওজনে ভারী দেখে তরমুজ কিনলে ঠকার সম্ভাবনা কম থাকে।
-
তরমুজ কেনার আগে তরমুজের গায়ে হালকা টোকা দিন। টোকা দেওয়ার পর যদি বুঝেন
ফাপা শব্দ হচ্ছে তাহলে বুঝবেন এই তরমুজটি পাকা আর যদি ভারি শব্দ মনে তাহলে
তরমুজ কাঁচা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ভালো তরমুজ চেনার উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি পদ্ধতি।
-
ভালো তরমুজ চেনার উপায় গুলোর মধ্যে আরেকটি উপায় হচ্ছে তরমুজের গোড়ার দিকের বোটা শুকনা আছে
কিনা। যদি বোটার দিকের গোড়া শুকনো হয় তাহলে বুঝবেন সেই তরমুজটি পাকা আর যদি
কাঁচা হয় তাহলে বুঝবেন সে তরমুজটিও কাঁচা।
-
পাকা তরমুজ চেনার আরেকটি উপায় হল তরমুজের গায়ের উপরের অংশ শক্ত ও মজবুত
কিনা। যদি শক্ত ও মজবুত হয় তাহলে বুঝবেন সে তরমুজটি পাকা আর যদি হালকা নরম
হয় তাহলে বুঝবেন তরমুজটি কাঁচা।
তরমুজের বিচি খাওয়ার নিয়ম
তরমুজ খেলে কি ওজন বাড়ে
তরমুজ খাওয়ার নিয়ম জানুন
তরমুজ এর অপকারিতা জানুন
-
যাদের হজম শক্তি কম তারা তরমুজ খেলে হজম শক্তি আরো কমে যায় ।যার ফলে ওই
ব্যক্তি দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়েন তরমুজ খেলে।
-
তরমুজের মধ্যে অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি আছে চিনি। যদি আপনি রাতের বেলা
তরমুজ বেশি খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনার ওজন বাড়তে পারে।
-
তরমুজের মধ্যে আছে ৯০ ভাগ পানি। যদি আপনি রাতের বেলা তরমুজ একটু বেশি পরিমাণে
খান।তাহলে ঘন ঘন আপনাকে প্রসাব করতে হবে ।এতে করে আপনার ঘুমের বেঘাত ঘটতে
পারে।
-
অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার কারণে আপনার এসিডিটি বেড়ে যেতে পারে। অর্থাৎ আপনার
গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং এতে করে আপনি অসুস্থ হতে পারেন।
-
অতিরিক্ত বিচিওলা তরমুজ যদি আপনি খেয়ে ফেলেন তাহলে এই বিচিগুলো আপনার পেট
ব্যথার কারণ হতে পারে। অর্থাৎ অতিরিক্ত বিচি সমৃদ্ধ তরমুজ খেলে সাধারণত পেট
ব্যাথাসহ অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।
এট্রাকশন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url