রক্ত শূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকার,রক্তশূন্যতা দূর করার উপায়

রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আপনি জানেন কি। যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ এই পোস্টে আজ আমি আলোচনা করব রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকার এবং রক্তশূন্যতা দূর করার উপায়। সারা বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ রক্তশূন্যতা রোগে আক্রান্ত।
রক্তশূন্যতার লক্ষন ও প্রতিকার
এই রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানার কারণে প্রতিবছর আমাদের দেশের অনেক মানুষ এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। এই রোগ কেন হয়, কিভাবে হয়, এর সঠিক প্রতিরোধ কি, চলুন এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকার - রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকার

রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকার কারণে প্রতিবছর আমাদের দেশের অনেক মানুষ এ রোগে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে। রক্তশূন্যতা হচ্ছে এমন একটি রোগ যেখানে রক্তের লোহিত কণিকা বা হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিকের সংখ্যা কমে যায়। যার ফলে রক্তে অক্সিজেন পরিমাণ ক্ষমতা কমে যায়। লোহিত কণিকা বা হিমোগ্লোবিন হচ্ছে রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একজন মানুষের শরীরে যখন স্বাভাবিকের চেয়ে এই উপাদানের সংখ্যা কমে যায় তখনই একে রক্তশূন্যতা রোগ বলে। 
এটা বয়স ভেদে যেকোনো সময় যেকোনো ব্যক্তি হতে পারে। যেকোনো বয়সে যদি লোহিত কণিকা বা হিমোগ্লোবিন কমে যায় তখনই তার শরীরে রক্তশূন্যতার লক্ষণ দেখা যায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মানুষের রক্তে হিমোগ্লোবিন থাকার দরকার ১৩.৫ থেকে ১৭.৫/১০০ মিলি। সাধারণত আমাদের দেশে পুরুষের তুলনায় নারীরা রক্তশূন্যতা রোগে বেশি ভুগে থাকেন।

তাই এ রোগের বিষয়ে পুরুষদের চেয়ে নারীদেরকে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রক্তশূন্যতা রোগ হলে কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায় এবং এ রোগের প্রতিকার কি এই বিষয়ে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। এই পোস্টটি যদি আপনি সম্পূর্ণ পড়েন আশা করি রক্তশূন্যতা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন তাহলে এই রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

রক্তশূন্যতা রোগ হলে মানব দেহে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। যা দেখে সহজেই চিহ্নিত করা যায় যে এই ব্যক্তি রক্তশূন্যতা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। যদি আপনি নিম্নে দেওয়া লক্ষণ গুলি মনে রাখতে পারেন তাহলে আপনার সহজে একজন রক্তশূন্যতা রোগীকে চিহ্নিত করতে পারবেন। রক্তশূন্যতা রোগের লক্ষণগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
  • চোখ ও মুখ ফ্যাকাসে বর্ণ হয়ে যায়
  • শরীর দুর্বল ভাব লাগে বা ক্লান্তি ভাব লাগে
  • মাঝেমধ্যে মাথা ঘোরে
  • বুক ধরফর করে
  • প্রায়ই বমি বমি ভাব দেখা যায়
  • চোখে ঝাপসা দেখে
  • মুখেও ঠোঁটে ঘা হয়
  • রক্তশূন্যতার ভাব যদি খুব বেশি হয় তাহলে শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখা যায় ও হার্টফেল করতে পারে
রক্তশূন্যতা রোগের প্রতিকার
যেহেতু রক্তশূন্যতার রোগ আগে থেকে বোঝার কোন উপায় থাকে না। তাই রক্ত বৃদ্ধি পাবে এরকম খাবার নিয়মিত খাবার তালিকা রাখতে হবে। যদি কোন কারনে এ রোগটি একবার দেখা যায় তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক হচ্ছে এই রোগটি। কারণ এই রোগটি গর্ভবতী মায়ের পাশাপাশি অনাগত শিশুরও হতে পারে।

তাই প্রতিদিন খাবার তালিকায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন খাবারের মধ্যে আয়রন আছে।
  • ছোট মাছ 
  • লাল শাক
  • কচু শাক
  • শিম ও শিমের বিচি
  • ডাটা শাক
  • পালং শাক
  • লাল মাংস
  • কলিজা
  • কাঁচা কলা
  • সামুদ্রিক মাছ
এইসব খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। যদি এই খাবারগুলো নিয়মিত খাবার তালিকায় রাখা যায়। তাহলে রক্তশূন্যতা রোগের হাত থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যাবে। তাই চেষ্টা করুন প্রতিদিন এই সমস্ত খাবারের মধ্যে দুটি বা তিনটি বা চারটি খাবার খাওয়ার জন্য। আশা করি আপনি রক্তশূন্যতা রোগ হতে মুক্ত থাকবেন।

রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়

রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে যদি জানা থাকে তাহলে সহজেই এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই রক্তশূন্যতা রক্ত দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানা দরকার। আমাদের দেশে শিশু ও পূর্ণবয়স্ক উভয় মিলে প্রায় ১২ থেকে ১৫ ভাগ লোক এ রোগে দ্বারা আক্রান্ত। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক রক্তশূন্যতা রোগ দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।
  • প্রতিদিন সকালবেলা এক চা চামচ মধু ও এক চা চামচ ভিনেগার খাওয়ার চেষ্টা করুন। চেষ্টা করুন দুটো একসঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার জন্য। কারণ মধুর মধ্যে আছে কপার ম্যাঙ্গানিজ ও আয়রন। এভাবে নিয়মিত খেলে রক্ত শুন্যতা রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া যায়।
  • প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ফলিক এসিড ও ভিটামিন বি ১২ সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। যেমন- ডিম কলা মটরশুঁটি কমলা ও দুধ জাতীয় খাবার। কারণ এসব খাবারের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ১২। এই খাবারগুলো নিয়মিত খেলে রক্ত শোনাতে রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • রক্তশূন্যতা রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ইপসম সল্ট খুব ভালো কাজ করে থাকে। একটি বালতিতে অর্ধেক পরিমাণ পানি নিয়ে এর মধ্যে দুই টেবিল চামচ ইপসাম সল্ট মিশে নিতে হবে। এরপর উক্ত পানিতে ৫ থেকে ১০ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এভাবে কয়েকদিন রাখলে দেখবেন আপনি অনেকটা এই রোগ থেকে উপশম পাবেন।
  • হাফ কাপ চিনি এক কাপ আপেলের জুস ও এক কাপ বিটরুটের জুস মিশিয়ে প্রতিদিন অন্তত একবার করে খাবেন। দেখবেন এভাবে নিয়মিত খেলে আপনি দ্রুত এই রোগ থেকে উপশম পাবেন।
  • খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন আয়রন সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। যেমন- মাছ, লাল মাংস,কচু শাক, পালং শাক, ডাটা শাক, গিলা, কলিজা, ডিম, দুধ, বাদাম ও সবুজ শাকসবজি। এই জাতীয় খাবারগুলো প্রতিদিন নিয়ম করে খেতে হবে। আর এভাবে খেলে রক্তশূন্যতা রোগের হাত থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যাবে।
  • প্রতিদিন খাবার তালিকায় চেষ্টা করতে হবে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখার জন্য। কারণ ভিটামিন সি অন্যান্য খাবার থেকে iron টেনে নিয়ে আসতে সাহায্য করে। যেমন টক জাতীয় ফল, লেবু, টমেটো, ক্যাপসিকাম।
  • চা, রেড ওয়াইন, কফি এ জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে। কারণ এই খাবারগুলো অন্যান্য খাবার থেকে আয়রন শোষণে বাধা প্রদান করে থাকে। তাই রক্তশূন্যতা রোগের জন্য এই খাবারগুলো একেবারেই নিষিদ্ধ। কোনভাবেই এই খাবারগুলো খাওয়া যাবে না। যদি কেউ খেয়ে ফেলে তাহলে তার সমস্যা আরো বাড়তে পারে।
  • হাত-পা মেসেজ করা রক্তশূন্যতা রোগ দূর করার জন্য সবচেয়ে অন্যতম একটি ঘরোয়া উপায়। যদি এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাত ও পা নিয়মিত মেসেজ করা যায় তাহলে রক্তচলাচলে সহজ হয়। যার ফলে এ রোগের প্রকোপ অনেকটা কমে যায়।
  • যদি কোন রক্তশূন্যতা আক্রান্ত ব্যক্তি প্রতিদিন আপেল ও টমেটোর জুস খায়। তাহলে ওই ব্যক্তির রক্তশূন্যতা রোগের প্রকোপ অনেক কমে যায় এবং সেই ব্যক্তি দ্রুত রোগ মুক্তি লাভ করে।
  • রক্তশূন্যতা রোগের জন্য কলা হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। এই খাবারের সাথে যদি একটু মধু মিশিয়ে খাওয়া যায় তাহলে তো কোন কথাই নেই। কারণ কলার মধ্যে যেমন প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে, তেমনি মধুর মধ্যেও আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন। এ দুটি খাবার একসঙ্গে খেলে এ রোগ থেকে দ্রুত উপশম পাওয়ার সুযোগ থাকে।
তাহলে রক্তশূন্যতা রোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য যে দশটি ঘরোয়া উপায় এখানে আলোচনা করা হলো। এই উপায় গুলো যদি আপনি সঠিকভাবে কাজে লাগান আশা করি আপনি দ্রুত এ রোগ থেকে মুক্তি পাবেন। তাই চেষ্টা করুন সবগুলি করতে না পারলেও এর মধ্যে তিনটি চারটি অথবা পাঁচটি নিয়ম প্রতিদিন ফলো করার জন্য।

মেয়েদের রক্তশূন্যতার লক্ষণ

আমাদের দেশে মেয়েদের রক্তশূন্যতার লক্ষণ অনেকগুলোই দেখা যায়। মেয়েদের রক্তশূন্যতা রোগ হয় মূলত খাবার কম খাওয়ার কারণে। বিশেষ করে খাবার তালিকায় আয়রন সম্পৃক্ত খাবার না থাকার কারণে এই সমস্যাটি মেয়েদের খুব বেশি দেখা যায়। গর্ভ অবস্থায় মেয়েদের প্রচুর পরিমাণে আয়রন প্রয়োজন হয়। কিন্তু খাবার স্বল্পতার কারণে অথবা অরুচির কারণে তারা এ খাবারগুলো ঠিকমতো খায় না।

যার ফলে আমাদের দেশের মেয়েদের রক্তশূন্যতার লক্ষণ বেশি দেখা যায়। মেয়েদের রক্তশূন্যতা রোগ হওয়ার আরেকটি বিশেষ কারণ আছে তা হল। অতিরিক্ত রক্তরণ সমৃদ্ধ ঋতুস্রাব। অথবা দীর্ঘমেয়াদী রক্ত ক্ষরণের কারণে এই সমস্যাটি খুব বেশি দেখা যায়। এছাড়াও আরো কিছু কারণ আছে যেগুলোর কারণে মেয়েদের রক্তশূন্যতা রোগের লক্ষণ খুব বেশি দেখা যায়।
মেয়েদের রক্তশূন্যতা রোগ হলে কি কি লক্ষণ প্রকাশ পায় চলুন এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক
  • মেয়েদের রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমুহের মধ্যে প্রথম যেটি লক্ষ্য করা যায় তা হল চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া
  • এছাড়াও মেয়েদের রক্তশূন্যতা হলে সাধারণত মাথা ঘুরে পড়ে যায়
  • শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া বা শরীরের মধ্যে ক্লান্তি ভাব চলে আসা
  • বুকের মধ্যে ধরফর করা
  • মাঝে মাঝে প্রচুর পরিমাণে মাথা ব্যথা করা
  • মেয়েদের বমি বমি ভাব বেশি দেখা যায়
  • মুখে ও ঠোঁটে মাঝে মাঝে ঘা হয়
  • চোখে কম দেখে বা ঝাপসা দেখে
  • শ্বাসকষ্ট ও হার্ট ফেল এর মত সমস্যা হতে পারে
এই সমস্যাগুলো মেয়েদের রক্তশূন্যতা হলে খুব বেশি দেখা যায়। এছাড়াও আরো অন্যান্য সমস্যা দেখা যেতে পারে তবে সেগুলো পরিমাণে খুবই কম। তাই মেয়েদের রক্তশূন্যতা রোগ দূর করতে খাবার তালিকায় অবশ্যই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি করে রাখতে হবে। তাহলে আমাদের দেশের মেয়েরা এ রোগ থেকে মুক্তি পাবে।
রক্তশূন্যতা রোগের খাবার সমূহ

রক্তশূন্যতা রোগের খাবার সমূহ 

রক্তশূন্যতা রোগের খাবার সমূহ তালিকা করলে দেখা যাবে আমরা যে খাবার প্রতিদিন খাই। এর ভিতরে অনেক খাবারের মধ্যে আয়রন থাকে। যে খাবারগুলো প্রতিদিন নিয়ম করে পরিমাণ মতো খেলে যে কোন ব্যক্তির রক্তশূন্যতা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কোন কোন খাবারের মধ্যে আয়রন থাকে এবং সে খাবার সমূহ কি কি।
  1. কলাঃ কলাতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন আছে। যদি কোন ব্যক্তি নিয়মিত একটি বা দুটি করে কলা খায় তাহলে ওই ব্যক্তির রক্তশূন্যতা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম থাকে। তাই চেষ্টা করুন নিয়মিত একটি অথবা দুটি কলা খাওয়ার জন্য। কলা আপনি রান্না করে খেতে পারেন অথবা পাকা কলাও  খেতে পারেন। যেটা আপনার জন্য সুবিধা হবে আপনি সেটাই খাবেন।
  2. দুধঃ দুধ হচ্ছে সকল পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিমান খাবার। দুধে আয়রনের পরিমাণ কম থাকলেও এটা নিয়মিত খাওয়ার ফলে একদিকে যেমন আয়রন যোগ হয় অন্যদিকে তেমনি ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম যোগ হয়। ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম অন্যান্য খাবার থেকে আয়রন শোষণ করতে সাহায্য করে। তাই দুধ হচ্ছে রক্তশূন্যতা রোগের জন্য উত্তমের একটি খাবার।
  3. মাছঃ আয়রনের ঘাটতি পূরণ করার জন্য মাছ হতে পারে অন্যতম একটি খাবার। কারণ মাসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ ও ছোট মাছ। যদি কোন রক্তশূন্যতা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি খাবার তালিকায় নিয়মিত মাছ রাখেন তাহলে এই সমস্যা থেকে দ্রুত উপশমা পাবেন।
  4. ফলমূলঃ এমন কিছু ফলমূল আছে যেগুলো খেলে শরীরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যোগ হয়। এই ফলগুলো যদি নিয়মিত খাওয়া যায় তাহলে রক্তশূন্যতা রোগী দ্রুত এ রোগ থেকে মুক্তি পায়।, ফলগুলো হল-আপেল, আঙ্গুর, টমেটো, বেদনা, কমলা, গাজর। আপনার খাবার তালিকায় প্রতিদিন অন্ততপক্ষে দুই থেকে তিনটি করে এই ফল রাখুন।
  5. চিনা বাদামঃ রক্তশূন্যতা রোগের জন্য চিনা বাদাম হতে পারে একটি ভালো খাবার। কারণ চীনা বাদামের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। যার ফলে নিয়মিত চিনা বাদাম খেলে রক্ত শূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  6. ডিমঃ ডিমের কুসুমের মধ্যে আছে পর্যাপ্ত আয়রন। তাই রক্তশূন্যতা রোগী যদি প্রতিদিন একটি করে ডিম খায়। তাহলে তার শরীরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যোগ হয়। আর এভাবে ডিম খাওয়ার মাধ্যমে রক্তশূন্যতা রোগ থেকে উপশম পাওয়া যায়।
  7. মধুঃ রক্তশূন্যতা রোগ দূর করার জন্য সর্বোত্তম একটি খাবার হচ্ছে মধু। যদি প্রতিদিন কোন রক্তশূন্যতা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি মধু খান তাহলে ওই ব্যক্তির রক্তশূন্যতা রোগ থেকে দ্রুত মুক্তি পাবে। কারণ মধুর মধ্যে আছে কপার ও ম্যাঙ্গানিজ যা বিভিন্ন খাবার থেকে দ্রুত আয়রন শোষণ করে আমাদের শরীরে সরবরাহ করে থাকে।
  8. কলিজাঃ কলিজাতে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন বি। রক্তশূন্যতা রোগের খাবার তালিকায় যদি কলিজা রাখা যায় তাহলে দ্রুত ওই রোগীর রক্তশূন্যতা সমস্যা কেটে যায়। তবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে গরুর কলিজা থেকে দূরে থাকুন।
  9. খেজুরঃ খেজুরে আছে ভরপুর আয়রন। খেজুর খেলে আমাদের দেহে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যোগ হয়। এছাড়া খেজুরে আরও অন্যান্য উপাদান আছে প্রচুর পরিমাণে। তাই নিয়মিত খাওয়ার তালিকায় খেজুর রাখুন। এভাবে খাবার তালিকায় খেজুর রাখলে রক্তশূন্যতার হাত থেকে দ্রুত রক্ষা পাওয়া যাবে।
  10. শাকসবজিঃ আমাদের দেশে এমন কিছু শাকসবজি আছে যেগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে। তাই এসব শাকসবজি যদি দৈনিক খাবার তালিকায় রাখা যায় তাহলে নিশ্চিত ভাবে রক্তশূন্যতা রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যেসব শাকসবজির মধ্যে আয়রন আছে সেগুলো হলো-পালং শাক, ডাটা শাক, কচু শাক, কচুর লতি, ব্রকলি, লেটুস, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা।
  11. ভিটামিন সিঃ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার রক্তশূন্যতা রোগের জন্য খুবই উপকারী। কারণ ভিটামিন সি অন্যান্য খাবার থেকে আয়রন শোষণ করে নিয়ে এসে আমাদের যোগ করে দেয়। যদি আমরা নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খায় তাহলে আপনার আমাদের শরীরে প্রচুর আয়রন যোগ হবে।
  12. সয়াবিনঃ সয়াবিনে আছে উচ্চ মান সমৃদ্ধ আয়রন ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। যদি খাবার তালিকায় নিয়মিত সয়াবিন রাখা যায়। তাহলে রক্তশূন্যতা রোগ হতে দ্রুত মুক্তি লাভ করা যায়।
এই খাবারগুলো যদি নিয়মিত কোন রক্তশূন্যতা রোগীর খাবার টেবিলে রাখা যায়। এবং এখান থেকে চারটি বা পাঁচটি খাবার প্রতিদিন নিয়ম করে খাওয়া যায়। তাহলে ওই রোগীর রক্তশূন্যতার রোগ থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাই আপনি চেষ্টা করবেন নিয়মিত এই খাবারগুলো আপনার খাবার টেবিলে রাখার জন্য এবং খাওয়ার জন্য।

রক্তশূন্যতা রোগের ঔষধ সমুহ

রক্তশূন্যতা রোগের ঔষধ সমুহ এর মধ্যে কিছু ওষুধ আছে যেগুলো নিয়মিত খেতে হবে এবং কিছু ওষুধ আছে যেগুলো ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। উপরে যে খাবারগুলোর কথা বলা আছে এগুলো খাবার পাশাপাশি যদি ঔষধ নিয়মিত খাওয়া যায় তাহলে রক্তশূন্যতা রোগের হাত থেকে সহজে রক্ষা পাওয়া যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে রক্তশূন্যতা রোগের ঔষধ সমূহ কি। চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো যাক। 
রক্তশূন্যতা রোগের চিকিৎসা করার আগে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ এই বিষয়গুলো লক্ষ্য না করে রক্তশূন্যতা রোগের ঔষধ না খাওয়াই ভালো। কি সেই বিষয়ে চলুন জেনে নেই।
  • ঔষধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী লৌহ ভিটামিন বি১২ ও ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে শরীরটাকে পুষ্ট রাখতে হবে।
  • যে খাবারগুলোতে আয়রন আছে সেই খাবারগুলো প্রতিদিন নিয়ম করে পরিমান মত খেতে হবে।
  • যেমন মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, বিভিন্ন ধরনের সবজি, কলিজা ইত্যাদি এই খাবারগুলো প্রতিদিন খেতে হবে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কি পরিমান খেতে হবে সেটা জেনে নিবেন। কারন এ রোগে আক্রান্ত রোগীকে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার নিয়মিত খেতে হবে। অন্যান্য খাবার থেকে সংগ্রহ করে মানুষের শরীরে নিয়ে আসে।
  • শিশু বয়স্ক গর্ভবতী মহিলা সবাইকে এই রোগের তীব্রতা কমানোর জন্য বা এ রোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য অবশ্যই ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেতে হবে। কারণ এটি আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে এবং রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে।
রক্তশূন্যতা রোগের জন্য যেসব চিকিৎসা নিতে হবে তা হল
  • যাদের রক্তশূন্যতা রোগের আক্রমণ কম বা তীব্রতা কম তাদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ফলিক এসিড খেতে হবে।
  • রক্তশূন্যতা রোগীর সবচেয়ে বড় ওষুধ হচ্ছে আয়রন ট্যাবলেট। কারণ শরীরে রক্ত শূন্যতার কারণেই বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। রক্তের ঘাটতি পূরণ করার জন্য অর্থাৎ শরীরের প্রচুর পরিমাণে রক্ত উৎপাদন করার জন্য আয়রন ট্যাবলেট হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঔষধ। এটি রক্তশূন্যতা রোগীকে নিয়মিত খেতে হবে এবং কতটুকু খেতে হবে বা কতদিন খেতে হবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • যাদের রোগের তীব্রতা মাঝারি তারা ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনজেকশন নিতে হবে।
  • যদি আপনার শূন্যতা রোগের তীব্রতা অনেক বেশি হয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে ইনজেকশন নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে। সমস্যা বেশি মনে হলে অক্সিজেন নাও লাগতে পারে।
  • এরিথ্রোপয়েটিন নামক কিডনির একপ্রকার হরমোন পাওয়া যায়। যেটি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। এ সময় কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত থাকায় কিডনিতে এই হরমোন তৈরি হতে বাধাগ্রস্ত হয়। তাই রক্তশূন্যতা রোগের জন্য এ হরমোনটি ব্যবহার করা খুবই ভালো।
উপরের থেকে আলোচনা থেকে নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পেরেছেন রক্তশূন্যতা রোগির জন্য কিভাবে চিকিৎসা নিতে হবে। কোন কোন খাবার খেতে হবে এবং কোন কোন ঔষধ খেতে হবে। আশা করি বিষয়টি আপনারা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন।

রক্তশূন্যতা রোগের কারণ জানুন

রক্তশূন্যতা রোগের কারণ জানুন,আপনি কি রক্তশূন্যতা রোগের সঠিক কারণ জানেন। কেন রক্তশূন্যতার রোগ হয় অথবা কিভাবে হয়। রক্তশূন্যতা রোগ হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যদি রক্তশূন্যতা রোগের কারণ সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকে। তাহলে আশা করি এই রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকবে। কারন আমরা কেউই চাইবো না আমাদের কারো রক্তশূন্যতা রোগ হোক যদি আমরা সঠিক কারণগুলো জানি।

চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক রক্তশূন্যতা রোগ এর কারণ সম্পর্কে
রক্তশূন্যতা রোগ হয় মূলত আয়রন এর অভাবে। সারা বিশ্বের প্রায় ৩০ শতাংশ লোক এই রোগে আক্রান্ত। পৃথিবীর প্রায় ৬০ কোটি লোক আয়রন জনিত সমস্যায় ভোগে। মূলত পুষ্টির অভাবে আয়রনের ঘাটতি ও খাবারের অরুচি এবং বিভিন্ন রোগের কারণে এই সমস্যাটা খুব বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া আরো অন্যান্য কারণ থাকতে পারে তবে এই কারণগুলোর কারণেই রক্তশূন্যতা রোগ সবচেয়ে বেশি হয়।

রক্তশূন্যতা রোগের যে কারণ গুলো আছে সেগুলোকে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায় যেমন-
  1. রক্তের লোহিত কণিকা উৎপাদন না হওয়াঃ মানুষের শরীরে ভিটামিন বি-১২ ফলিক এসিড ইত্যাদির অভাবে সাধারণত লোহিত কণিকা উৎপাদন হয় না বা কম হয়। যখনই লোহিত কণিকা কম উৎপাদন হয় তখনই শরীরের ভেতরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। অথবা বিভিন্ন রোগের কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে যেমন-কিডনি ফে্ইল, লিভার ফেইল, থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা, যক্ষা সহ নানান রোগের কারণে এই রোগ হতে পারে।
  2. রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙ্গে যাওয়াঃ জন্মগত রোগ থ্যালাসেমিয়া অথবা ম্যালেরিয়া জীবাণুর কারণে রক্তের লোহিত কণিকা ভেঙ্গে গিয়ে রক্তশূন্যতা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  3. রক্তক্ষরণ জনিত রোগের কারণেঃ পাইলস, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, দুর্ঘটনা জনিত কারণে রক্তক্ষরণ, কৃমি, পেপটিক আলসার ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যথার ওষুধ খাওয়ার কারণে রক্তশূন্যতা রোগে দেখা যেতে পারে।
তাহলে উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম রক্তশূন্যতা রোগ হওয়ার কারণ কি। যদি এই বিষয়গুলো আমরা ভালোভাবে জানি এবং সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করি। আর যেগুলো পরিত্যাগ করা দরকার সেগুলো পরিত্যাগ করতে পারি। তাহলে এ রোগের হাত থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। আশা করি রক্তশূন্যতা রোগের কারণ আপনারা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।

রক্তশূন্যতা রোগের কারণ ও প্রতিকার

রক্তশূন্যতা রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকেরই জানা প্রয়োজন। কারণ এই রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানলে আমরা এই রোগ থেকে দূরে থাকতে পারবো। আর এজন্যই আজ আমি রক্তশূন্যতা রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে এই পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি আপনারা এই বিষয়টি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

রক্তশূন্যতা রোগের কারণঃ
রক্তশূন্যতা রোগ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন পুষ্টি জনিত সমস্যার কারণে রক্তশূন্যতা রোগ হতে পারে। যে খাবারগুলোর মধ্যে আইরন আছে সে খাবার গুলো যদি আপনি না খান তাহলে নিশ্চিত ভাবে আপনি রক্তশূন্যতার রোগের মুখোমুখি হতে পারেন। গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায় এই খাবার গুলোর প্রতি অরুচির কারণে এ খাবারগুলো নিয়মিত খায়না। যার ফলে মা ও শিশু দুজনই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়।

এছাড়াও শরীরের ভিতরে রক্তের লোহিত কণিকা তৈরি না হওয়ার কারণে রক্তশূন্যতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের সমস্যার কারণেও রক্তশূন্যতা দেখা যায়। বেশি ঔষুধ সেবনের কারণে এই সমস্যা দেখা যেতে পারে বিশেষ করে ব্যাথানাশক। এছাড়াও কিছু কিছু রোগের কারণে রক্তশূন্যতা রোগ দেখা যেতে পারে। যদি আপনার কিডনি ফেইল হয় তাহলে এই সমস্যা হতে পারে।

আমার যদি আপনার লিভার ফেইল হয় তাহলে এই সমস্যা হতে পারে। যক্ষা জনিত কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকে। থাইরয়েড হরমোনের কারণে রক্তশূন্যতা রোগ দেখা যায়। পাইলস, অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, কৃমি, পেকটিকালচার ইত্যাদি রোগের কারণে রক্ত শূন্যতার রং বেশি দেখা যায়। এছাড়াও রক্তশূন্যতা রোগের কারণ হিসেবে আরো বেশ কিছু কারণ রয়েছে। মূলত আমাদের দেহে এইসব কারণেই রক্তশূন্যতা রোগ বেশি দেখা যায়।
রক্তশূন্যতা রোগের প্রতিকারঃ
রক্তশূন্যতা রোগের প্রতিকার যদি আপনার জানা থাকে তাহলে খুবই ভালো যদি না জানা থাকে তাহলে এই লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। রক্তশূন্যতা রোগের প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ সবচেয়ে ভালো। আপনারা চেষ্টা করবেন প্রতিরোধ করার জন্য। তারপরও যদি দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। চলুন জেনে নেই রক্তশূন্যতা রোগের প্রতিকার কি।

  • আয়রন সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেতে হবেঃ রক্তশূন্যতা রোগের প্রতিকারের মধ্যে এটি অন্যতম একটি প্রতিকার। অর্থাৎ রক্তশূন্যতা রোগ হলে প্রথমে আপনাকে এ কাজটি করতে হবে। যে খাবার গুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে সে খাবারগুলো প্রতিদিন খেতে হবে। যত বেশি আপনি এই খাবারগুলো খেতে পারবেন তত বেশি সমস্যা দ্রুত কেটে যাবে।
  • যেসব সবজি খেতে হবেঃযে খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে সেই খাবারগুলো হল-বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি যেমন- কচু শাক, পালন শাক, ডাটা শাক, কচুর লতি, ব্রকলি, লেটুস, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা। এই জাতীয় খাবার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় আপনাকে অবশ্যই রাখতে হবে। নিয়মিত এই খাবারগুলো খাওয়ার মাধ্যমে রক্ত শুন্যতার রোগের প্রবণতা অনেকটাই কমানো যায়।
  • আয়রনসমৃদ্ধ যেসব খাবার খাবেনঃলাল মাংস, কলিজা, দুধ, ডিম এই জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। তাই এই খাবারগুলো আপনার খাবার তালিকায় রাখতে হবে এবং প্রতিদিন নিয়ম করে পরিমাণ মতো অবশ্যই খেতে হবে। তাহলেই এ রোগ থেকে আপনি রক্ষা পাবেন।
  • যেসব ফল খেতে হবেঃযেসব ফলের ভেতরে আয়রন থাকে সেসব ফল নিয়মিত খেতে হবে। আপেল, আঙ্গুর, টমেটো, বেদনা, গাজর এই খাবার গুলোর মধ্যে আয়রন আছে। যদি এই খাবারগুলো নিয়ম করে খাওয়া যায় তাহলে রক্ত শূন্যতা রোগেরহাত থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া যায়।
  • অন্যান্য যেসব খাবার খেতে হবেঃএছাড়াও কলা মধু সয়াবিন মাছ চিনা বাদাম এই জাতীয় খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন বিদ্যমান থাকে। এই জাতীয় খাবার প্রতিদিন আপনার খাবার তালিকায় রাখতে হবে এবং নিয়ম করে খেতে হবে। তাহলে আপনি রক্তশূন্যতার উপরে হাত থেকে উপশম পাবেন।
তাহলে উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম রক্তশূন্যতা রোগের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। যদি এই কারণগুলো জেনে থাকি ও প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা পেয়ে থাকি। এবং এই নিয়ম অনুযায়ী কাজ করে থাকি তাহলে আশা করি আপনারা এই রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।

রক্তশূন্যতা হলে কিভাবে বুঝবো

রক্তশূন্যতা হলে কিভাবে বুঝবো এরকম প্রশ্ন আপনার মনে আসতে পারে। রক্তশূন্যতার রোগ হলে বিভিন্ন লক্ষণ দেখে বোঝা যায় আপনার রক্তশূন্যতা রোগ হয়েছে কিনা। এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন তাহলে বুঝতে পারবেন রক্তশূন্যতা রোগ কিভাবে বোঝা যায়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনার রক্তশূন্যতার রোগ হয়েছে।

রক্তশূন্যতা হলে কিভাবে বুঝবো
  • রক্তশূন্যতা রোগের প্রথম যে লক্ষণ তা হল চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাবে। এরকম লক্ষণ দেখলে আপনি নিশ্চিত ভাবে বুঝতে পারবেন যে আপনার রক্তশূন্যতা রোগ হয়েছে।
  • রক্ত শুন্যতার রোগ হলে প্রচুর মাথা ব্যাথা করবে। যদি আপনার হঠাৎ করে প্রচুর পরিমাণে মাথা ব্যাথা করে এবং সেটা দীর্ঘদিন চলে হয় তাহলে বুঝবেন আপনার রোগ হয়েছে।
  • যদি আপনি হঠাৎ করে চোখে ঝাপসা দেখেন বা আফসা দেখেন অর্থাৎ চোখে কম দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে আপনার শরীরে রক্তশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
  • মেয়েদের ক্ষেত্রে রক্তশূন্যতার রোগ দেখা দিলে ঘন ঘন বমি বমি ভাব হতে পারে। এরকম লক্ষণ দেখলে আপনাকে বুঝতে হবে আপনার শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে।
  • যদি আপনার হঠাৎ করেই শরীরের দুর্বল ভাব চলে আসে অর্থাৎ ক্লান্তি ভাব চলে আসে তাহলে আপনি ধরে নিতে পারেন যে আপনার শরীরে রক্তশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  • যদি হঠাৎ করে আপনার মুখে ও ঠোটে ঘা হয় এবং সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়। মাঝে মধ্যেই এই সমস্যা দেখা দেয় তাহলে বুঝতে পারবেন আপনার শরীরে রক্তশূন্যতা রোগের লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
  • যদি হঠাৎ করে আপনার বুক ধরফর করে তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার শরীরে রক্তশূন্যতার লক্ষণ দেখা গিয়েছে।
  • যদি আপনার হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্ট জনীত সমস্যা দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে আপনি রক্তশূন্যতা রোগে ভুগছেন।
তাহলে উপরের আলোচনা থেকে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন রক্তশূন্যতার রোগ হলে আপনি কিভাবে বুঝবেন। যে লক্ষণ গুলো এখানে বলা হয়েছে এই লক্ষণ গুলোর মধ্যে একটি বা দুটি অথবা দুইয়ের অধিক এরকম সমস্যা যদি আপনার শরীরে দেখা যায়। তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবে বুঝে নেবেন যে আপনি রক্তশূন্যতা রোগে ভুগতেছেন।

কি কি খাবার খেলে রক্তশূন্যতা দূর করা যায়

কি কি খাবার খেলে রক্তশূন্যতাদূর করা যায় আপনারা অনেকেই জানতে চান। সত্যি কথা বলতে কি যদি আমরা এই বিষয়গুলো জানি যে কোন কোন খাবার খেলে রক্ত শুন্যতা রোগ দূর করা যায়। তাহলে আমরা এর থেকে অনেকটাই রক্ষা পেতে পারি। আপনি প্রতিদিন যে খাবারগুলো খান এই খাবারগুলোর মধ্যে কিছু কিছু খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে যে খাবারগুলো নিয়মিত ও পরিমানমত খেলেই আপনার রক্তশূন্যতা রোগের সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন।

  • যেসব শাক সবজি খেলে রক্ত শোনাতে রোগ দূর করা যায়-ডাটা শাক,পালং শাক, কচু শাক, ব্রকলি, কচুর লতি, লেটুস, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা, শিম ও শিমের বীজ। এসব শাকসবজি নিয়মিত খেলে রক্তশূন্যতা রোগ শরীর থেকে দূর করা যায়।
  • যেসব ফল খেলে রক্তশূন্যতা রোগ দূর করা যায় তা হল-কলা, আপেল, আঙ্গুর, টমেটো, বেদনা, গাজর,বিট রুট। এইসব ফল যদি আপনার খাবার তালিকায় রাখেন এবং নিয়মিত খান তাহলে রক্তশূন্যতা রোগ থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
  • এছাড়াও খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান আছে। তাই যদি পরিমিত পরিমাণে খেজুর খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের ঘাটতি পূরণ হওয়ার কারণে রক্তশূন্যতা রোগ থেকে দূরে থাকতে পারবেন।
  • দুগ্ধ জাতীয় খাবার খেলে রক্তশূন্যতা রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কারণ এর মধ্যে আয়রন সহ আছে প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি উপাদান। যেগুলো রক্ত তৈরি পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • প্রতিদিন নিয়ম করে ডিম খেলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হওয়ার মাধ্যমে রক্তশূন্যতা রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • ছোট মাছ ও সামুদ্রিক মাছ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন বিদ্যমান থাকে। যদি এই জাতীয় মাছ নিয়মিত আপনার খাবার টেবিলে রাখা যায় এবং পরিমাণ মতো প্রতিদিন খাওয়া যায় তাহলে রক্তশূন্যতা রোগের হাত থেকে দূরে থাকা যায়।
  • চিনা বাদামে আছেপর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন। তাই যদি নিয়মিত চিনা বাদাম খাওয়া যায়। তাহলে শরীরে আয়রন যোগ হওয়ার মাধ্যমে রক্তশূন্যতা রোগের হাত থেকে দূরে থাকা যায়।
  • রক্তশূন্যতা রোগের হাত থেকে রক্ষার জন্য মধু একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। যদি প্রতিদিন নিয়ম করে মধু খাওয়া যায় তাহলে এ রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • কলিজাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন বিদ্যমান থাকে। যদি আপনি আপনার খাবার তালিকায় কলিজা রাখতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের রক্তশূন্যতা রোগ দূর হবে অর্থাৎ শরীর থেকে রক্তশূন্যতার রোগ দূর করা যায়।
  • সয়াবিন জাতীয় খাবারের মধ্যে আছে আয়রন। যে খাবার নিয়মিত গ্রহণ করার মাধ্যমে শরীর থেকে রক্তশূন্যতা রোগ দূর করা যায়।
  • ভিটামিন কি জাতীয় খাবার নিয়মিত খাবারের মাধ্যমে রক্তশূন্যতা রোগ দূর করা যায়। কারণ ভিটামিন সি অন্যান্য খাবার থেকে আয়রন শোষণ করে আমাদের শরীরে সরবরাহ করে। তাই প্রতিদিন খাবার তালিকায় ভিটামিন সি জাতীয় খাবার রাখবেন।
তাহলে উপরের আলোচনা থেকে আপনারা জানতে পারলেন কোন কোন খাবার খেলে রক্তশূন্যতা রোগ শরীর থেকে দূর করা যায়। তাই চেষ্টা করুন প্রতিদিন এই খাবারগুলো আপনার খাবার তালিকায় রাখার জন্য। এবং নিয়মিত এই খাবারগুলো খাওয়ার জন্য। দেখুন এই খাবারগুলো নিয়মিত খেলে আপনার শরীর থেকে রক্ত শূন্যতা রোগ চিরতরে দূর হয়ে যাবে।

শেষ কথাঃ রক্তশূন্যতা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

রক্তশূন্যতা রোগ হল মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর একটি রোগ। এ রোগের কারণে আমাদের  শরীরে ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। যেহেতু এই রোগটি হওয়ার আগে বোঝা যায় না। তাই এই রোগ যেন না হয় এজন্য আমাদের আগে থেকে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। অর্থাৎ আয়রনসমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন পরিমাণ মতো আমাদের খেতে হবে। যদি নিয়মিত আপনি আয়রন সমৃদ্ধ খাবার আপনার খাবার টেবিলে রাখতে পারেন এবং খেতে পারেন তাহলে এই রোগের হাত থেকে আপনি সহজেই রক্ষা পেতে পাবেন।

তাহলে উপরের আলোচনা থেকে আপনি জানতে পারলেন রক্তশূন্যতা রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার। রক্তশূন্য কেন হয় কিভাবে হয় কখন হয় এই রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা কি এবং প্রতিকার কি। আশা করি বিষয়গুলো আপনি খুব ভালো হবে বুঝতে পেরেছেন। এই সাইটে নিয়মিত বিভিন্ন তথ্যবহুল পোস্ট করা হয়। এরকম বিভিন্ন তথ্যবহুল পোস্ট পাওয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে থাকুন। যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে বা কোন কিছু জানার থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এট্রাকশন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url