কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক - কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে

কলমি শাকের ক্ষতিকর ‍দিক কি। কিভাবে আমাদের ক্ষতি করে।অথবা কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে, আপনার মনে এরকম অনেক প্রশ্ন আসতে পারে। চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।কলমি শাক হল মানব দেহের জন্য অত্যন্ত পুষ্টি উপাদান সমৃ্দ্ধ একটি শাক।

কলমি শাকের ক্ষতিকর ‍দিক এটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যোগ করার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ ব্যাধির হাত থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে। আবার কিছু কিছু সময় এটি আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিও করে থাকে।কলমি শাক আমাদের দেহের জন্য কি ক্ষতি করে বা কি উপকার করে এ সমস্ত বিষয় এই পোষ্টের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো,তাই আশা করি এই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি উপকৃত হবেন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক - কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে

কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক

কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক জেনে যদি আমরা নিয়মিত কলমি শাক খায় তাহলে কলমি শাক আমাদের দেহের জন্য অনেক নিরাপদ ও পুষ্টিকর। তবে অনেক সময় এটি আমাদের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। আমাদের পৃথিবীতে প্রত্যেকটা জিনিসেরই যেমন উপকারী দিক থাকে তেমনি অপকারি দিকও আছে। যদিও এটি আমাদের শরীরের অনেক পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরন করে।

বিভিন্ন রোগ ব্যাধি দমনে কাজ করে বা রোগ ব্যাধি প্রতিরোধে কাজ করে থাকে। তবে কলমি শাক খাওয়ার নিয়ম,সময়,মাত্রা এর উপর নির্ভর করে অনেক সময় আমাদের শরীরে ক্ষতিকর কিছু দিক বয়ে নিয়ে আছে। কলমি শাক আমাদের দেহে কি ক্ষতি করে  চলুন একনজরে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

  • এলার্জির আধিক্যঃ কলমি শাক খেতে অনেক সুস্বাদু এবং প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি কোন সমৃদ্ধ। কিন্তু যাদের অ্যালার্জি সমস্যা আছে তাদের জন্য এই শাক হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ কলমি শাকের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে এলার্জির উপাদান। একটু বেশি পরিমাণে খেলে প্রচুর পরিমাণে এলার্জির চাপ দিতে পারে।
  • কিডনিতে পাথর গঠনের সাহায্য করেঃ যদি কোন ব্যক্তি নিয়মিত কলমি শাক খায় তাহলে ওই ব্যক্তির কিডনিতে পাথর হতে পারে। কারণ কলমি শাক কিডনিতে পাথর গঠনের সাহায্য করে। কলমি শাকের মধ্যে যে উপাদান গুলো আছে তা দীর্ঘদিন কোন ব্যক্তি খেলে তার কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

আরো পড়ুনঃ তরমুজ বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা। ভালো তরমুজ চেনার উপায়

  • রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতিঃ কলমি শাক মানব দেহের জন্য উপকারে হলেও এর মধ্যে কিছু রাসায়নিক উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া যায়। যদি এটি আপনি নিয়মিত খান তাহলে এই পদার্থ গুলির কারণে আপনার শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে।
  • ডায়রিয়া জনিত সমস্যাঃ নিয়মিত কলমি শাক খেলে যেমন আমাদের শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যোগ হয়। তেমনি নিয়মিত বা অতিরিক্ত কলমি শাক খেলে যে কোন সময় আপনার ডায়রিয়া জনিত সমস্যা হতে পারে। তাই কলমি শাক খাওয়ার সময় চিন্তা ভাবনা করে নিয়ম মেনে অবশ্যই খেতে হবে ।
  • প্রেসার নিয়ন্ত্রণ থাকেনাঃ কলমি শাক বিভিন্ন ধরনের উপকার করে থাকলেও আমাদের দেহের প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খুব ভালো কাজ করে না। অর্থাৎ কলমি শাক প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেলে যে কোন সময় আপনার শরীরের পেশার কমে যেতে পারে।
  • এন্টিনিউট্রিয়েন্টস থাকেঃ কলমি শাকে আছে টেনিন ও ফাইটেট এর মত উপাদান যা আমাদের শরীরের জিংক ক্যালসিয়াম এবং আয়রন এর মত কিছু পুষ্টি উপাদান শোষণকে বাধাপ্রস্ত করে থাকে।
  • উচ্চফাইবার উপাদানঃ কলমি শাক আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী হলেও এর মধ্যে আছে কিছু উচ্চ ফাইবার উপাদান। যা আমাদের শরীরে যেকোনো সময় অস্বস্তি বা ফোলা ভাব এর মত অবস্থা তৈরি করতে পারে ।
  • রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করেঃ প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন কে আছে কলমি শাকের ভেতরে। যদি আমরা অতিরিক্ত কলমি শাক খেয়ে ফেলি তাহলে আমাদের শরীরের রক্ত জমাট বাঁধতে সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে যাদের শরীরের রক্ত জমাট কম বাধে তাদের জন্য বেশি সমস্যা হতে পারে।
  • বিষাক্ত পদার্থ সমৃদ্ধঃ কলমি শাক বিভিন্ন সময় দূষিত পরিবেশে উৎপাদন করা হয়। আর দূষিত পরিবেশে এসব শাক উৎপাদন করার কারণে পলিক্লরিনেটেট বাইফেনাইল মত ক্ষতিকারক বিষাক্ত পদার্থ এ শাকের মধ্যে থাকতে পারে যা খেলে আপনার অথবা আমার শরীরে যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের সমস্যা হতে পারে।
  • ভারী ধাতু জমে যায়ঃ অত্যন্ত উপকারী কলমি শাক মাটি থেকে ক্যাডমিয়াম ও সিসা এর মতো ভারী ধাতু গ্রহণ করতে পারে। যা খেলে আমাদের শরীরে যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই প্রয়োজন ছাড়া এবং অতিরিক্ত কলমি শাক না খাওয়াই ভালো।
  • গইট্রোজেন উপাদান থাকেঃ কলমি শাকে অত্যন্ত পুষ্টিকর উপাদান থাকলেও এটি ব্রকলি ও বাঁধাকপি এর মত কলমি শাক এর ভেতরে গইট্রোজেন থাকে। যদি এই শাক আপনি অতিরিক্ত পরিমাণ খেয়ে থাকেন তাহলে আপনার শরীরের থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোন তৈরিতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
  • পরিশেষেঃ কলমি শাকের উপকারিতার কথা ভেবে অতিরিক্ত শাক খাওয়ার কারনে আপনার অনেক ক্ষতি হতে পারে,তাই কলমি শাক খাওয়ার আগে অবশ্যই কলমি শাকের ক্ষতির পরিমান জেনে তারপরে খাবেন।

কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে

কলমি শাক মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী ও সুস্বাদু একটি শাক। নিয়ম করে এই শাঁক খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। তবে এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে। কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

কলমি শাকে অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি আছে নাইট্রিক অক্সাইড। যা সাধারণত আমাদের দেহের প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। নিয়ম করে কলমি শাক খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে। এছাড়াও কলমি শাকে আরো কিছু উপাদান আছে যেগুলো আমাদের প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।যেমন ফাইবার প্রোটিন মিনারেল কার্বোহাইড্রেট।

এই সমস্ত উপাদান আমাদের প্রেসার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যদি প্রতিদিন পরিমাণ মতো কলমি শাক খাওয়া যায় তাহলে রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এই বিষয়গুলো থেকে আমরা বলতে পারি যে যদি নিয়ম করে নিয়মিত কলমি শাক খাওয়া যায় তাহলে রক্তের চাপ বাড়েও না আবার কমেও না অর্থাৎ প্রেসার নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকে।

উপরিক্ত আলোচনা থেকে আপনি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন কলমি শাক খেলে প্রেসার বাড়ে না কমে।
অতএব নিয়ম মেনে কলমি শাক খান এবং প্রেসার নিয়ত্রনে রাখুন।

কলমি শাকে কি কি ভিটামিন আছে

কলমি শাক হলো প্রচুর পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ একটি শাক, এই শাকের মধ্যে আছে প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে। যদি আমরা ১০০ গ্রাম কলমি শাক ধরি তাহলে এর মধ্যে পানি আছে ৮৯.৭ গ্রাম, আমিষ ৩.৯ গ্রাম, লেীহ ০.৬ গ্রাম।

আরো আছে শ্বেতসার ৪.৪ গ্রাম, আশ ১.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ০.৭১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন ০.৯ মিলিগ্রাম, নায়াসিন ১.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪৯ মিলিগ্রাম, ক্যালরি ৩০ কিলো ক্যালোরি। এছাড়াও কলমি শাকের মধ্যে আরও অনেকগুলো পুষ্টি উপাদান আছে যেগুলো পরিমাণে কম আছে।

তাই এখানে উল্লেখ করা হলো না, এক কথায় বলা যায় একজন মানুষের জন্য যে উপাদান গুলো প্রয়োজন তার অনেকগুলোই কলমি শাকের মধ্যে আছে। যদি আপনি প্রতিদিন নিয়ম করে পরিমান মত কলমি শাক খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যোগ হবে এবং বিভিন্ন রোগ বালাই এর হাত থেকে রক্ষা পাবেন বলে আশা করছি।

কলমি শাক খেলে কি হয়

কলমি শাক খেলে আমরা বিভিন্নভাবে উপকৃত হই। এটি একদিকে যেমন আমাদের শরীরে শাকের ঘাটতি মেটাই অন্যদিকে শরীরে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান যোগ করে। মানুষের লিভার ভালো রাখতে কলমি শাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।যদি আপনার লিভারের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবে খাবার তালিকায় কলমি শাক রাখতে পারেন।

আপনার শরীরের যদি ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকে। তাহলে নিশ্চিতভাবে আপনি প্রতিদিন নিয়ম করে কলমি শাক খান। এরপর দেখুন আপনার শরীরে ক্যালসিয়াম ঘাটতে পূরণ হবে। কারণ কলমি শাকের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। তাই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে কলমি শাকের কোন তুলনা হয় না বললেই চলে।

আমাদের দেশের অনেক মানুষ কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের ভোগে। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করার জন্য খাবার তালিকায় কলমি শাক রাখুন। কলমি শাকের রস আখের গুড় দিয়ে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে এবং বিকাল দুই গ্লাস করে খাবেন। দেখবেন কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ আপনার শরীর থেকে পালিয়ে যাবে। তবে এটি নিয়মিত কয়েক সপ্তাহ খেতে হবে।

যদি আপনি নিয়মিত বিভিন্ন রোগে ভোগেন। তাহলে বুঝতে হবে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত কলমি শাক খেতে হবে। কারণ কলমি শাকের মধ্যে এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলো প্রতিটি মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়। তবে অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো কারণ কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।

যদি আপনার দৃষ্টি শক্তি কম থাকে। তাহলে তো কলমি শাকের বিকল্প কোনো কিছু নেই। কারণ কলমি সাথে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। যেটি আপনার চোখকে ভালো রাখবে এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে দেবে। তাই আপনার দৃষ্টিশক্তিকে ভালো রাখতে নিয়মিত কলমি শাক খাবেন। তবে সেটা প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়।
কলমি শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

কলমি শাকের উপকারিতা

কলমি শাক খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এই শাকের আছে হাজারো উপকারিতা। যা আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের উপকার করে থাকে। এই শাক নিয়মিত খাওয়ার ফলে আমরা শারীরিক দিক থেকে বিভিন্নভাবে উপকৃত হই। কলমি শাক আমাদের জন্য কি কি উপকার করে থাকে চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

  • কলমি শাকে আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা আমাদের হার কে শক্ত ও মজবুত করে, ছোটবেলা থেকে যদি কোন শিশুকে কলমি শাক খাওয়ানো যায়, তাহলে তাদের হাড় শক্ত হয় এবং হাড়ের বিভিন্ন রোগ থেকে দ্বারা মুক্তি পায়।তাই প্রতিদিন আপনার শিশুকে কলমি শাক খাওয়ান এতে করে আপনার শিশুর হাড় শক্ত হবে।
  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ শাক হচ্ছে কলমি শাক, অর্থাৎ কলমি শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যামন রয়েছে্ যা মানব শরীরে এন্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি করার মাধ্যমে মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রত্যেকটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে কলমি শাক খাওয়া উচিত।
  • কলমি শাকে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন।কলমি শাকে আয়রন থাকার কারণে কলমি শাক শরীরে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে, বিশেষ করে অ্যানিমিয়া রোগের জন্য এটি খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। যদি আপনার পরিবারের সদস্যদের নিয়মিত কলমি শাক খাওয়ান তাহলে এরকম বড় ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
  • আমাদের প্রত্যেকটি ব্যক্তির জীবনে কোন না কোন সময় বসন্ত রোগ হয়ে থাকে। আর বসন্ত রোগের সাধারণত কোনরকম ঔষধ পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হচ্ছে কলমি শাক। কারণ বসন্ত রোগের প্রতিশোধক হিসেবে কলমি শাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই বসন্ত রোগে রোগ হতে উপশম পেতে নিয়মিত কলমি শাক খাবেন।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ একটি ক্ষতিকর মারাত্মক রোগ। কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দমনে কলমি শাক মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে,কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দমন করতে প্রতিদিন আখের গুড়ের সাথে কলমি শাকের রস মিশিয়ে খেলে, খুব দ্রুত এ রোগ থেকে উপশম পাওয়া যায়। তাহলে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দমনে কলমি শাক কিভাবে কাজ করে।

এছাড়াও কলমি শাক আরো যেসব উপকার করে থাকে।

  • কলমি শাকে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। যা দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে খুবই ভালো কাজ করে।
  • কলমি সাথে আছে ১৩ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যেগুলো শরীরের ভেতর থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। ফলে শরীরে ক্যান্সার কোশের সংখ্যা আর বাড়ে না। তাই কলমি শাক খেলে ক্যান্সার রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম থাকে।
  • সর্দি ও কাশি নিরাময়ের কলমি শাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • হার্টের রক্তনালীতে ময়লা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।যার ফলে কলমি শাক নিয়মিত খেলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। 
  • শিশু জন্মের পর যদি মায়ের বুকের বুকের দুধ কম পায় তাহলে ওই মাকে নিয়মিত কলমি শাক খাওয়ান। দেখুন শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাবে।
  • যদি আপনার শরীরের কোন অংশে ফোড়া হয় তাহলে কলমি শাক পিশে উক্ত জায়গায় লাগিয়ে দিন এরপর দেখুন ম্যাজিক এর মত কাজ করবে।
  • রাতকানা রোগ নির্ময়ে কলমি শাকের কোন বিকল্প নেই বললেই চলে। কারণ এর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। যদি কোন ব্যক্তি নিয়মিত কলমি শাক খায় তাহলে সে দ্রুত রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি পাবে।
  • পিঁপড়া মৌমাছি বা এজাতীয় বিষাক্ত কোন পোকামাকড় যদি শরীরে কোন অংশে কামড় দেয়।এবং প্রচুর পরিমাণে যন্ত্রণা করে। তাহলে কলমি শাকের পাতা বোটাসহ পিশে উক্ত জায়গায় লাগিয়ে দিন। এরপর দেখুন ব্যথা কত দ্রুত সেরে যায়।
  • যদি আপনি শারীরিকভাবে দুর্বল থাকেন তাহলে নিয়ম করে কলমি শাক খান। দেখবেন আপনার শারীরিক দুর্বলতা খুব দ্রুত কেটে যাবে।
  • পুরানো আমাশয় দূর করতে কলমি শাকের কোন জুড়ি নেই। কলমি শাকের রসের সাথে আখের গুড় মিশিয়ে নিয়মিত খেলে পুরনো আমাশয় দ্রুত ভালো হয়ে যায়।

 গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় কলমি শাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য। কারণ কলমি শাকে অনেকগুলো পুষ্টি উপাদান আছে যেগুলো গর্ভবতী মা এবং গর্ভের সন্তানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। যেমন ভিটামিন সি থাকার কারণে গর্ভবতী মা ও শিশু দুজনের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়, অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।

কলমি শাকে আছে অত্যন্ত উপকারী ফলিক এসিড, যা অনগত শিশুর নলেজ ও মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে, অর্থাৎ কলমি শাক গর্ভ অবস্থায় খেলে শিশুর বুদ্ধি জ্ঞান ভালো হয়। গর্ব অবস্থায় কলমি শাক খেলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি কমে যায়। গর্ব অবস্থায় কর্মী শাক খেলে শিশু শারীরিকভাবে বেশি বৃদ্ধি পায়। তাই নিয়ম করে একজন গর্ভবতী মাকে কলমি শাক খাওয়া উচিত।

অতিরিক্ত শাক খেলে কি হয়

কথায় আছে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয় ।তেমনি অতিরিক্ত শাঁক খাওয়া একজন লোকের জন্য কখনোই ভালো কিছু নয়। অতি লাভের আশায় যদি কেউ অতিরিক্ত শাঁক খেয়ে ফেলে তাহলে যেকোনো সময় তার যেকোনো ধরনের সমস্যা হতে পারে। মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

বিশেষ করে কলমি শাক অতিরিক্ত খেলে সমস্যা হতে পারে, কারণ এই শাক অতিরিক্ত খেলে হতে পারে বদহজম।যাদের আগে থেকে অ্যালার্জি সমস্যা আছে তাদের জন্য এই শাক অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়, কারণ এই শাক অতিরিক্ত খেলে এলার্জি অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কিছু কিছু কলমি শাকে ভিটামিন কে আছে যা রক্ত যখন বাড়তে বাধা প্রদান করে, এজন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত কলমি শাক না খাওয়াই ভালো, যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি হতে পারে। শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তিকে শাক খেতে হবে। তবে সেটা কোনোভাবেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। তাই চেষ্টা করুন পরিমাণ মতো শাক খাওয়ার জন্য।

কলমি শাকের ঔষধি গুন

কলমি শাক প্রচুর পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ একটি শাক। এই শাক খাওয়ার কারণে আমাদের শরীরে অনেক মূল্যবান পুষ্টি উপাদান যোগ হয়। এর পাশাপাশি কলমি শাকের আছে অনেক ঔষধি গুণ। যদি নিয়মিত কলমি শাক খাওয়া যায় তাহলে আমরা বিভিন্ন রোগ ব্যাধির হাত থেকে সহজেই রক্ষা পাবো। চলুন জেনে আসি কলমি শাকের কি কি ঔষধিগুন আছে। 

  • যদি আপনার শরীরের কোন অংশে ফোড়া হয়। তাহলে কলমি শাকের পাতা বেটে এর মধ্যে একটু আদার রস নিয়ে ফোড়া চারপাশে ভালোভাবে লাগিয়ে দিন, এভাবে দুই থেকে তিন দিন নিয়মিত ব্যবহার করুন। এরপর দেখুন সেই ফোড়া গলে সেখান থেকে পুঁজ বেরিয়ে যাবে।
  • যদি কারো রাত কানা রোগের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে কলমি শাক প্রতিদিন এক বেলা ভাজি করে রান্না করে খেলে এ রোগ থেকে কিছুটা উপশম পাওয়া যায়।
  • যদি কোন শিশুর মায়ের দুধ শুকিয়ে যায় বা কমে যায়, তাহলে কলমি শাক ছোট মাছ দিয়ে রান্না করে খেলে ওই মায়ের দুধের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের জন্য কলমি শাক একটি খুবই ভালো ও গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হিসেবে কাজ করে, অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করতে কলমি শাকের রস করে এক পোয়া পরিমাণ সাথে মিশিয়ে, শরবত বানিয়ে সকাল বিকাল এক সপ্তাহ খেলে এ রোগ থেকে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়।
  • কলমি শাকে বিদ্যমান অনেক বেশি ক্যালসিয়াম। যা প্রতিটি মানুষের হারের গঠনে সাহায্য করে। নিয়মিত কলমি শাক খেলে আপনার হার হবে মজবুত।
  • কলমি শাকে বিদ্যমান আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। যা আমাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে। যার ফলে কলমি শাক খেলে প্রতিটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়।
  • কলমি শাকে আছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যেগুলো আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ কলমি শাক খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়।
  • বিষাক্ত পোকামাকড় কামড় দেওয়ার কারণে যদি আপনার শরীর বিষাক্ত হয়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ওই জায়গায় কলমি শাকের রস লাগিয়ে দিন এরপর দেখুন কত দ্রুত উপশমও পাওয়া যায়।
  • শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে কলমি শাকের আছে বিশেষ ঔষধি গুণ। যদি আপনি শারীরিকভাবে দুর্বল হযন তাহলে নিয়মিত কলমি শাক খান দেখুন দ্রুত দুর্বলতা কেটে যাবে।
  • কলমি শাক বসন্ত রোগের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ কলমি শাক নিয়মিত খেলে বসন্ত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।

কলমি শাকে এলার্জি

কলমি শাক আমার কাছে খুবই সুস্বাদু একটু শাক মনে হয়, আমি আশা করি আপনাদের কাছেও এটি খুবই ভালোলাগার একটি শাক। কলমি শাক খেলে শারীরিকভাবে বিভিন্ন রোগব্যাধির হাত থেকে আমরা সবাই রক্ষা পাই। কিন্তু এই শাকে আছে প্রচুর পরিমাণে এলার্জি, যদি আপনার শরীরে আগে থেকে এলার্জির ভাব থাকে তাহলে এই শাক আপনার জন্য নয়।

অথবা আপনি খেতে পারেন তবে সেটা পরিমাণে খুবই কম, যদি আপনার নিয়মিত খান তাহলে এলার্জি জাতীয় যে সমস্যা গুলো হয় সেগুলো আপনার যেকোনো সময় হতে পারে। তাই এলার্জিজনিত সমস্যা থাকলে এই শাক পরিমাণে কম খেতে হবে। এবং সাবধানে খেতে হবে। নিয়ম করে এই শাক খেলে আশা করি এরকম সমস্যা নাও হতে পারে। 

 শেষ কথা

কলমি শাক খুবই পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি শাক, কলমি শাকের ক্ষতিকর দিক যেমন আছে তেমনি আছে উপকারী দিক,তবে ক্ষতির চেয়ে উপকারটাই বেশি,তাই আপনি যদি কলমি শাক মাঝেমাঝে খান তাহলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত হবেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে। তাই আমার পরামর্শ প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও এই শাকটি আপনি খাবেন,আশা করি আপনি উপকৃত হবেন।

উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম কলমি শাক আমাদের জন্য কিভাবে ক্ষতি করে। এবং কলমি শাক খেলে আমাদের শরীরের প্রেসার কমে না বাড়ে। আবার কলমি শাক  আমাদের দেহের জন্য কি কি উপকার সাধন করে থাকে। আমাদের এই সাইটে নিয়মিত এরকম তথ্য সমৃদ্ধ বিভিন্ন পোস্ট করা হয়। তাই সঠিক তথ্য জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এট্রাকশন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url